Make our mind vaster than space

Make our mind vaster than space
Milky Way Galaxy

Thursday, December 29, 2011

থালিডোমাইড ট্রাজেডি

ষাটের দশকে স্কুলগুলোতে এই ধরনের 
ফকোমালি আক্রান্ত বাচ্চা দেখা যেত। এটা ছিল থালিডোমাইড  ট্রাজেডির ফলাফল


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনিদ্রা ছিল বিশ্বের প্রধান সমস্যা। থালিডোমাইড তখন আবির্ভূত হয় ঘুমের ঔষধ হিসেবে। সে সময় প্রতি ৭ জন আমেরিকানের ভিতর ১ জন নিয়মিত এই ঔষধ সেবন করত। ইউরোপের বাজারে এই নন বারবিচুরেটটির চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তখন এই ঔষধটি বাজার দখল করে নিল।

Over-the-counter remedy হিসেবে এই ঔষধটি ১৯৫৭ তে জার্মান বাজারে প্রবেশ করে। অর্থাৎ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঔষধটি কেনা যেত এবং ব্যবহার করা যেত। প্রস্তুতকারীর দাবি ছিল ঔষধটি নিরাপদ এমনকি গর্ভবতী মহিলারাও এটা ব্যবহার করতে পারবেন। প্রস্তুতকারী আরও দাবি করল থালিডোমাইডের এমন কোন ডোস পাওয়া যায় নি যা একটা ইঁদুরকে মারতে পারে। ১৯৬০ সালের ভিতর প্রায় ৪৬ টি দেশে থালিডোমাইড বাজারজাত করা হল। এর বেচাকেনার হার প্রায় অ্যাসপিরিনের কাছাকাছি চলে গেল।

এই সময় অস্ট্রেলিয়ান প্রসুতিবিদ ডা উইলিয়াম মাকব্রাইড আবিষ্কার করলেন থালিডোমাইড গর্ভবতী মহিলাদের মর্নিং সিকনেসে ভালো কাজ করে। এরপর গোটা বিশ্বে থালিডোমাইড গর্ভবতী মহিলাদের মর্নিং সিকনেসের জন্য প্রেসক্রাইব করা শুরু হল।

কিন্তু ১৯৬১ সালে ডা উইলিয়াম মাকব্রাইড নিজেই সন্দেহ করতে লাগলেন এই থালিডোমাইডের সাথে তার হাতে জন্ম নেওয়া সদ্যজাত শিশুদের জন্মগত সমস্যার সম্পর্ক।

১৯৬১ সালে জার্মান সংবাদপত্রগুলো এইরকম ১৬১ টি কেসের কথা জানায় এবং জার্মানি হতে ঔষধটি নিষিদ্ধ  করা হয়। ১৯৬২ সালের মার্চের ভিতর অধিকাংশ দেশ নিষিদ্ধ করে ঔষধটি।


কেউ বলতে পারে না কত বাচ্চা এই ঔষধটির শিকার হয়েছিল। এটা ধারণা করা হয় ১০০০০ হতে পারে এর শিকার।

আমেরিকাতে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ত্রেসনের ফার্মাকোলজিস্ত এবং এমডি
Frances Oldham Kelsey থালিডোমাইডের বাজারজাতকরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যদিও থালিডোমাইড আমেরিকাতে সরকারিভাবে বাজারজাত কখনও হয় নাই এটা লক্ষ লক্ষ লোক নিজেরা সংগ্রহ করে খেত।
Kelsey এই কারণে ১৯৬২ সালে জন এফ কেনেডির কাছ থেকে পুরস্কার পান।


১৯৬২ সালে ইউ এস কংগ্রেস আইন পাস করে যে কোন ড্রাগ প্রেগনেন্সিতে ব্যবহারের জন্য বাজারজাতকরনের পূর্বে পরীক্ষা বা ট্রায়াল করে দেখতে হবে।




থালিডোমাইডের ভয়ংকর প্রভাব হচ্ছে
 গর্ভবতী মহিলারা এটি গ্রহন করলে পরে দেখা যায় জন্ম নেওয়া সন্তানদের হবে  ফকোমালি নামক একটি বিকাশবিকৃতিজনিত রোগ বা কঞ্জেনিটাল ডিসিস যেখানে কিনা হাত-পাগুলো হয় স্বাভাবিকের চেয় অনেক ছোট এবং অঙ্গুলগুলোর বিকাশও স্বাভাবিক হয় না, কান ও অন্ত্রের বিকাশও হয় অস্বাভাবিকভ্রুনগতবিকাশবিকৃতির অনুঘটক রাসায়নিককে বলা হয় টেরাটোজেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে থালিডোমাইডের টেরাটোজেনিসিটির উতস কি? দেখা যায় যে, টোটাল সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় কারখানায় সংশ্লেষিত থালিডোমাইড ধারণ করে আর ও এস এনান্টিওমারের অর্ধক অর্ধেক অনুপাত, একটি আইসোমার টার্গেট ইনহিবিট করে এবং অপরটি ইনহিবিট করে সম্পুর্ণই নতুন ও অনাকাঙ্খিত একটি টার্গেট যেই টার্গেটটি কিনা হাত-পা এর বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে



থালিডমাইড টেরাটোজেন গর্ভধারণের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে, এরপর থালিডমাইড সম্পুর্ণই নিরাপদ

তাই বাজার থেকে তুলে নেওয়া থালিডোমাইড আবার বাজারে প্রবেশের অনুমতি পায় এবং এখন এটি ব্যাবহার হচ্ছে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সার চিকিতসায় ১৯৯৮ সালের ১৬ জুন

Tuesday, December 13, 2011

ভিক্টোরিয়া হ্রদ


কাম্পালা, উগান্ডার একটি রিসোর্ট থেকে তোলা ভিক্টোরিয়া হ্রদের ছবি 

বিভিক্টোরিয়া হ্রদ আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ । ক্ষেত্রফলের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির আধার । তবে গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি পানির আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম  তানজানিয়া , কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যবর্তী একটি সুউচ্চ মালভূমির উপর এটি অবস্থিত । এ হ্রদে প্রায় ৩০০০ টি ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে যার অনেকগুলোতেই মানব বসতি রয়েছে নীল নদ এর দীর্ঘতম উৎস সাদা নীলের উৎপত্তি এ হ্রদ থেকেই।

ভিক্টোরিয়া তুলনামূলকভাবে নবীন একটি হ্রদ । বর্তমান জলাধারটি সৃষ্টি হয় ৪,০০,০০০ বছর পূর্বে১৭,৩০০ বছর পূর্বে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায় । ১৪,৭০০ বছর পূর্বে এটি পুনরায় ভরে উঠে।

ভিক্টোরিয়া হ্রদের কথা প্রথম শোনা যায় আরব বণিকদের বিবরণীতে । সোনা হাতির দাঁতের খোঁজে আরবরা আফ্রিকার অভ্যন্তরে নৌপথগুলো ব্যবহার করতো ১১৬০ সালের একটি আরব মানচিত্রে ভিক্টোরিয়া হ্রদকে সুস্পষ্টভাবে সঠিক অবস্থানসহ চিহ্নিত করা হয়। 
১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী জন হানিং স্পেক(John Hanning Speke) মধ্য আফ্রিকায় অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সর্বপ্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে উপস্থিত হন । বিশাল জলরাশি দেখে তার মনে হয় এটিই নীল নদের উৎস । মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে তিনি এটির নামকরণ করেন  
ব্রিটিশ মিশনারী ও অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন(David Livingstone) স্পেকের দাবীর সত্যতা যাচাই করতে ব্যর্থ হন । তিনি আরও পশ্চিমে কংগো নদীর কাছে পৌঁছান অবশেষে আমেরিকান আবিষ্কারক হেনরি মরটন স্ট্যানলি(Henry Morton Stanley) এর সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হন।  

স্যাটেলাইট থেকে তোলা ভিক্টোরিয়া হ্রদের ছবি,পশ্চিমে মেঘ ঢাকা কঙ্গোর বনাঞ্চল দেখা যাচ্ছে 


এদিকে এক ধরনের কচুরিপানার ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে আফ্রিকার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া হ্রদ সম্পূর্ণ মজে যেতে বসেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রাইট জানিয়েছেন, এই কচুরিপানার জন্য ভিক্টোরিয়া হ্রদের পার্শ্ববর্তী তিনটি দেশ কেনিয়া, উগান্ডা এবং তাঞ্জানিয়ায় ব্যাপক মানবিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
মানবসৃষ্ট ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদের জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ।মৎস্য সম্পদ থেকে আয় বাড়াতে ১৯৫৪ সালে হ্রদে নাইল পার্চ মাছ ছাড়া হয় । ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এরা হ্রদে সীমিত আকারে ছিল । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এদের ব্যাপক বংশবিস্তার ঘটে । একই সাথে হ্রদে নাইল তেলাপিয়া ছাড়া হয় । বন ধ্বংস করা , অতিরিক্ত জনসংখ্যার পাশাপাশি এ মাছগুলোর আধিক্য হ্রদের জীব বৈচিত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে । বহু অণুজীব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে ।


ন্যালিউবেল বাঁধ
 ন্যালিউবেল বাঁধঃ ভিক্টোরিয়া হ্রদের একমাত্র বহির্গামী উৎস উগান্ডার জিনজা তে অবস্থিত । প্রাকৃতিক একটি বাঁধের মাধ্যমে বহির্গামী পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হত । ১৯৫২ সালে পানি প্রবাহ বাড়াতে ব্রিটিশ ঔপেনিবেশিক প্রকৌশলীরা প্রাকৃতিক জল সংরক্ষণাগারটি ধ্বংস করে দেন ।
২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উগান্ডা নীল নদীতে বাঁধ দিয়ে দ্বিতীয় জল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে এরপর হ্রদের পানিস্তরের উচ্চতা ৮০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসে । কেনীয় বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান করে দেখেন চুক্তি ভঙ্গ করে উগান্ডা দ্বিগুণ পরিমাণ পানি ছেড়ে দিচ্ছে  



১৯ শতকের শুরু থেকই লেক ভিক্টোরিয়া ফেরি সার্ভিস তানজানিয়া কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম প্রধান বন্দরগুলোর মধ্যে আছে কিসুমো জিনজা পোর্ট বেল  

১৯৯৬ সালের ২১ মে বুকোবা ফেরি ডুবে ৮০০ জন লোক মারা যান। এটি ছিল তানজানিয়ার রেলওয়ে সার্ভিসের ফেরি।

উগান্ডার তানজানিয়ার রেলওয়ে সার্ভিসের ৩টি ফেরি আছে। কাবালেগা,কাও্যা এবং পেমবা।

২০০৫ সালের ৮ মের ভোরবেলা কাবালেগা এবং কাও্যার ভিতর মুখোমুখি সংঘর্ষ হল। সৌভাগ্যবশত কারও ক্ষতি হয়নি।

২০০৬ এর ২৮ এপ্রিল এম ভি ন্যামাগেনি নামে এক কার্গোশিপ ডুবে ২৮ জন নিহত হয়।

২০১০ সালের ৬ আগস্ট ভিক্টোরিয়া হ্রদে তীব্র বাতাসে নৌকা উল্টে গিয়ে তাঞ্জানিয়ার ১৮ জন শিশু নিহত হয়

সূত্রঃ

উইকিপিডিয়া 
 

Sunday, December 11, 2011

হাসপাতালে আগুন দেশে দেশে


৯ ডিসেম্বর ২০১১।



সারা বিশ্ব আতঙ্ক হয়ে দেখল
দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ার এএমআরআই হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। একের পর একে লাশ বের করছে উদ্ধারকর্মীরা। অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৯০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছেআহত হয়েছেন আরও অনেকেনিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও আছেন নিহত বাংলাদেশির নাম গৌরাঙ্গ মণ্ডল (৬৫)তাঁর বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়স্নায়ুজাত রোগের চিকিৎসার জন্য গত বুধবার তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হনতাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলকাতায় বাংলাদেশি উপহাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানতিনি জানান, লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শনের পর কলকাতার ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল সিল করে দিয়েছে রাজ্য সরকারপরিদর্শনের পর তাঁরা বলেন, বেসমেন্ট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাততদন্তের স্বার্থে তাঁরা সেখান থেকে বেশ কিছু নমুনাও সংগ্রহ করেনএরই মধ্যে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে 


যারা সুস্থ হতে এসেছিল হাসপাতালে তারাই মারা গেল হাসপাতালে। বিশ্বে এ ধরনের অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।

১৯৪২ সালের ৯ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডের সিক্লিফ মানসিক হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ৩৭ জন। 
১৯৫০ সালে আমেরিকার একটি হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ৪১ জন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে হাসপাতালে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল গুয়াতেমালায় ১৪ জুলাই, ১৯৬০-এ. গুয়াতেমালার মানসিক হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ২৫ জন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের সেন্ট অ্যান্টনিজ হাসাপাতালে বিধ্বংসী আগুন. মৃত্যু হয় কমপক্ষে ৭৪ জনের
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই মিসৌরিতে ওয়ারেংটন নার্সিং হোমে আগুন লেগেছিল ১৯৫৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সেই অগ্নিকাণ্ডে বলি হন ৭২ জন
১৯৭১ সালে সুইজারল্যান্ডের মানসিক ক্লিনিকে আগুন লেগে মারা যায় ২৮ জন।
১৯৯৪ এর ডিসেম্বর মাসে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে সাউথসাইড  হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ৪ জন।
১৯৯৮ সালের ১৬ মে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাতে হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ২০ জন।
১৯৯৯ সালের রাশিয়ার লেনিনগ্রাডে অবলাস্ট হাসপাতালের
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২১ জন মারা যায়।
২০০৩ সালের ১২ অক্টোবর বেলারুশে মানসিক হাসপাতালে আগুনে ৩০ জন মারা যায়।
২০০৫ সালের ২৪ জানুয়ারি দক্ষিণ ইরাকের নাসিরিয়ায় হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ১৪ জন।
২০০৫ সালের ১২ জুলাই কোস্টারিকায় হাসপাতালে আগুন লেগে মারা যায় ১৮ জন।
২০০৬ সালে চীনে হাসপাতালে আগুনের ঘটনায় ২৭ জন নিহত হয়।
হাসপাতালে ভয়াবহ আগুনের সাম্প্রতিকতম দুর্ঘটনাটি ঘটে মস্কোয়. ২০০৬ সালেআগুন লাগে ড্রাগ রিহ্যাব হাসপাতালে. মারা যান অন্তত ৪৫ জন

Sunday, November 6, 2011

UFO (Unidentified Flying Object) রহস্য



২০০৬ সালের নভেম্বর মাস। তখন কলেজে মাত্র ক্লাস শুরু হয়েছে ঠিকঠাক। তখন সায়েন্স ওয়ার্ল্ড এ আমার এই লেখাটি ছাপা হয়। লেখাটি লিখেছিলাম ২০০৬ এর এপ্রিলে। এসএসসি পরীক্ষার পরের বন্ধে। আজ নেট ব্রাউস করতে করতে একটা সাইটে লেখাটি পেলাম। ছবি সহ শুভ্র আকাশ নামের এক ভাই ছবিসহ লেখাটি শেয়ার করেছেন। ৫ বছর পর লেখাটি দেখে নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। তাই নিজের ব্লগে শেয়ার করলাম। 


ফ্লাইং সসার কি ?
ফ্লাইং সসার (Flying Saucer) দেখতে চাকতির মতো, এক ধরণের রহস্যময় ধাতব আকাশযান। তবে ফাইং সসার বলতে কেউ ভিনগ্রহী আকাশযানকে বোঝান। ফ্লাইং সসারই বলুন আর গুপ্তচর বিমান, অসনাক্ত বিমানই বলুন- তা সবই UFO (Unidentified Flying Object)-এর অন্তর্গত। সেই খ্রীষ্টিয় বর্ষ (A.D) শুরুর আগ থেকেই ফ্লাইং সসার মানুষকে আকৃষ্ট করে চলেছে। মানুষ হতবুদ্ধি হয়েছে, উত্তেজিত হয়েছে, খুঁজে চলেছে সেই আকাশযানের উৎসকে।
খ্রীষ্টপূর্ব ১৫ শতকে মিশরের ফারাও ছিলেন তুতেম খানম। তার সময় জনতা আকাশে দেখেছিল বিচিত্র ধরণের আগুনের গোলা। সে সময় সেনাবাহিনী খুঁজেছিল গোলার উৎসকে। হঠাৎ সেই গোলা অদৃশ্য হয়ে যায়। ষোড়শ শতকে কি কোন আকাশযান ছিলো ? না।
তাহলে ১৬৮৬ সালের ৯ জুলাই তারিখে জার্মানীর লিপজিক অধিবাসীরা কিভাবে রহস্যময় এক ধাতব বস্তুকে উড়তে দেখেছিলো ?
১৭৫৬ সালে সুইডেনের লোকেরাও দেখেছিলো এ ধরণের অদ্ভূত রহস্যময় বস্তু। ইউরোপ বিশ্বের একটি অতি জনপ্রিয় ইউফো দেখার জায়গা।
১৯৮০ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি ত্রিকোণাকার বস্তু সন্ধ্যার পর প্রায়ই দেখা দিতে লাগলো। কালো বন্তুটির তিন কোণায় তিনটি লাল আলো, মাঝে সবুজ বৃত্ত। কয়েকদিন পর আকাশযানটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
সেই সময় ইংল্যান্ডেও ইউফো দেখা দিতে লাগলো। সেই সাথে Crop Circle 3, Crop Circle , অর্থাৎ রাতের বেলা কে বা কারা জমির শস্যেক্ষেতে শস্য মাড়িয়ে বিভিন্ন আকৃতির নকশা তৈরী করে যায়। অনেকে বলেন, ভিনগ্রহের প্রাণীরা এইসব করে দিয়ে যায়। মানুষের পক্ষে এই নকশা তৈরী করা অসম্ভব।
কারণ অতি জটিল ও সুক্ষ Crop Circle গুলো তৈরী করতে মানুষের প্রচুর সময় লাগবে, অন্তত এক রাতের মধ্যে নয়। তবে Crop Circle কিছু মানুষ তৈরি করেছে বলে জানা যায়।
প্রত্যদর্শীরা Crop Circle তৈরী করার সময় অনেক ইউফো এবং আলোক বিন্দু দেখেছেন। সবচেয়ে লৌহমর্ষক ঘটনা ঘটে, ১৯৯৪ সালে। ঐ বছর কিছু লোক স্টোনহেঞ্জ ভ্রমণ করতে আকাশে ওঠেন। ৪৫ মিনিট পর আবার স্টোনহেঞ্জ দেখতে এসে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটা জটিল Crop Circle দেখতে পান।
এতো জটিল Crop Circle মানুষ ৪৫ মিনিটে তৈরি করতে পারে না। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্সের প্লেন ক্যামেরাসহ অজানা আলোকে তাড়া করে, তাদের ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেলো, অজানা আলো যে ক্ষেতের উপর দিয়ে যাচ্ছে, শস্য কাত হয়ে যাচ্ছে, Crop Circle তৈরি হচ্ছে। অজানা আলো অদৃশ্য হয়ে যায়। এগুলোও ইউফো বটে। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যায় Crop Circle এর মাধ্যমে।
২০০২ সালে ইংল্যান্ডের এক শস্যবৃত্তে এক এলিয়ানের মুখচ্ছবি এবং তার হাতে ধরে রাখা একটি গোলক দেখা গিয়েছিলো। এছাড়াও হাজারো ধরণের শস্য গোলক প্রতি বছরই আবিষ্কৃত হচ্ছে। গবেষণাগারে ঐ নুয়ে পড়া শস্যগুলো পর্যবেক্ষণের পর জানা গেল -প্রচুর পরিমাণ মাইক্রোওয়েভ মিথস্ক্রিয়ার ফলে ওগুলোর এ অবস্থা হয়েছে।
১৯৮৫ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর দিয়ে উড়ে যায় একটি অদ্ভূত পিরিচ আকৃতির আকাশযান। একে নামানোর জন্য প্রেরিত বেতারবার্তা ফিরে আসে। তারপর একে নামাতে আকাশে উড়ে যায় ভয়ংকর বিমান ‘ফ্যান্টম’। এই বিমান দিয়েই ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল অনায়াসে ৬ দিনের যুদ্ধে জয়লাভ করে। এ বিমানের রয়েছে মিসাইল ও পারমানবিক বোমা বহনের ক্ষমতা; কিন্তু বোমা মারার বোতাম টিপে দেখা গেল তা বিকল হয়ে গেছে। ঐ নভোযান চলে যাওয়ার পর ২টি বিমান সচল হয়। ইরান দাবি করে, তার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পশ্চিমারা এই আকাশযান পাঠিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করে জানায় অন্য বিমানের সুইচ বিকল করার যন্ত্র তাদের কাছে নেই এবং বিমানটিও তাদের না।
১৯৫৭ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণ করে, তখন আমেরিকাও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। স্নায়ুযুদ্ধ তখন শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ১৯৬৯-এ প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখতে সক্ষম হয়। অবশ্য তার আগে থেকেই আকাশে ইউফো দেখা যায়। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের লোক ইউফো দেখার দাবি জানান। কেউ কেউ আবার ভিনগ্রহীদের হাতে অপহৃত হয়েছেন বলে দাবি করেন। আমেরিকার সেনাবাহিনীর সাথে ইউফোর সংশ্লিষ্টতার কথা অনেকেই তোলেন। এর কারণও অনেক। ১৯৭৮ সালে নিউ অরলিন্স অঙ্গরাজ্যের একটি ফিওয়েতে যাচ্ছিলেন তিনজন মহিলা। তারা হঠাৎ দেখলেন, একটি অদ্ভূত আকাশযান উড়ে যাচ্ছে। তাকে তাড়া করে উড়ে যাচ্ছে মার্কিন বিমানবাহিনীর ১৭টি হেলিকপ্টার। মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেলে তাপ অনুভব করলেন তারা। দিগন্তে মিলিয়ে গেল হেলিকপ্টার আর আকাশযান। তখন কিছু বুঝতে না পারলেও রাতে শুরু হলো প্রদাহ। চোখ জ্বলছে, শরীর জ্বলছে। সবারই একই অবস্থা। পরদিন তারা স্থানীয় ডাক্তারের কাছে সবকিছু খুলে বললেন। ডাক্তার স্থানীয় এক পত্রিকাকে ঘটনাটি জানালেন। পত্রিকার কাছে অভিযোগ এসেছে, আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে ৬-৭টি হেলিকপ্টার একত্রে উড়ে গেছে। রাস্তার উপর ফাটল চিহ্ন দেখা গেছে। কিছুদিন পর পুলিশ রাস্তায় রোডব্লক বসিয়ে রাস্তা মেরামত করে। অনেকে একে ’কন্সপিরেসি’ বলে আখ্যা দেন এবং বলেন ইউএস এয়ারফোর্স অন্তত একটি ভিনগ্রহী আকাশযান আটকে রেখেছে। তা অস্বীকার করলো বিমানবাহিনী। কিন্তু ১০ বছর পর একটি টিভি সাক্ষাৎকার পুরো কাহিনী পাল্টে দেয়।
৭ই জুলাই চীনের আকাশে দেখা যাওয়া সসার এর ছবি
AREA 51
১৯৮৭ সালে নিউ মেক্সিকোর স্থানীয় টিভি চ্যানেলের এম আর টিভি একটি টিভি সাক্ষাৎকার নেয়। এক Undercover (পরিচয় গোপনকারী) ব্যক্তি দাবি করেন- তিনি ‘AREA51’ নামে এক মরুভূমির মাঝে একটি সামরিক বেসে একটি ফ্লাইং সসার নিয়ে গবেষণা করেন।
AREA 51
ঐ বেসের প্রধান তাকে বলেন, এটি ভিনগ্রহ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলো এবং তাদের আরোহীদের হত্যা করে ইউএস আর্মি এটা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা এর কার্যকলাপ বুঝতে ব্যর্থ হন। তাই একজন পদার্থবিজ্ঞানীর সহায়তা চান মেজর। অবশ্য, ঐ লোকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল পদার্থবিজ্ঞানে।
তারপরও ফ্লাইং সসার সম্বন্ধে তাকে কেন ডাকা হলো কেউ জানে না। যা হোক, ঐ লোক দাবি করেন, ঐ আকাশযান কোন শব্দ ছাড়াই উত্তোলন বা অবতরণ করা সম্ভব। তাহলে এ এক অতি উন্নত সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করে। তিনি আরো দাবি করেন যে, সেখানে আরও একটি উন্নত যন্ত্র রয়েছে যার কার্যকলাপ তিনি বুঝতে পারেননি। সেখানে সেই যন্ত্রের ভেতরে একটি গোলাকার কক্ষ, যার মাঝে রয়েছে গোলাকার একটি প্যানেল। আর সেই গোলাকার প্যানেলের উপরে রয়েছে একটি বৃত্ত, যা ছাদ থেকে ঝুলছে। এই বৃত্তাকার যন্ত্রটিই বোধ হয় ফাইং সসারের মাথা। মেস কমান্ডার মেজর হেল দাবি করেন, ঐ এলাকার উপরে আরো ফ্লাইং সসার আসে, তিনি ঐ পদার্থবিজ্ঞানীকে সতর্ক করে দেন-কেউ যেন এ বিষয়ে না জানে। কিন্তু বিজ্ঞানী তার বন্ধুদের জানিয়ে দেন। তখন মেজর তাকে কাজ থেকে বহিষ্কার করেন এবং শাসিয়ে যান। তার কিছুদিন পর তাকে হত্যা করতে গুলি ছোঁড়া হয়। তাই তিনি টিভির শরণাপন্ন হয়েছেন। কিছুদিন পর তিনি স্বপরিচয় স্বীকার করেন এবং জানান ইউফো দেখতে হলে ‘AREA51’ ই উপযুক্ত স্থান। এর অনেক প্রমাণও আছে। ‘AREA51’ -এর ১০ কি.মি. ব্যাসার্ধে থাকে অস্ত্রধারী সৈন্য। কেউ ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে পারে না। গুলি করার নির্দেশ আছে। Discovery Channel এর ক্যামেরায় রাতের বেলা অজানা আলো ‘AREA51’ -এর উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার দৃশ্য রেকর্ড আছে। তবে কর্তৃপক্ষ ‘AREA51’ কে মানচিত্রে স্থান দেননি এবং তাকে হাইপারসনিক বিমানের গবেষণাগার হিসেবে চিহ্নিত করে। সোভিয়েত স্যাটেলাইট ঐ স্থানে কাঠামোর ছবি তোলে, কোনো ইউফো দেখা যায়নি। ইউফোনামার প্রত্যদর্শীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর, মাঝ রাতে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারে নির্জন পথ ধরে হেঁটে আসছিলো নরম্যান মাসকোরোলা নামের এক যুবক। হঠাৎ সে অবাক হয়ে দেখলো- খোলা মাঠের উপর একটা বিরাট জিনিস, যার ব্যস প্রায় ২৫ মিটার, মাটি থেকে সামান্য উপর দিয়ে এগিয়ে আসছে। গোলাকার বস্তুর পরিধি ঘিরে উজ্জ্বল আলোর মালা, নরম্যান ভয়ে রাস্তার পাশে লুকালো। তারপর দেখলো, সেই অদ্ভূত জিনিসটা আকাশে চক্কর দিয়ে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। ১৯৬৪ সালে দু’টি ঘটনা শুধু আমেরিকা নয়, গোটা পৃথিবী জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। সেই বছরের ২৪ এপ্রিল নিউ মেক্সিকোর সোকরাতে সন্ধ্যাবেলায় এক টহলদার পুলিশ দেখতে পেলেন, রাস্তা থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট দুরে সবুজ আগুনের একটি শিখা। সাহস করে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে পুলিশটি দেখলেন-প্রায় ২০ ফুট চওড়া অর্ধ গোলাকার বস্তু দাঁড়িয়ে আছে চারটি পায়ার উপর ভর করে। একটু কাছে যাওয়া মাত্র সেটা প্রচন্ড গর্জন করে শূণ্যে উড়ে গেলো। তার নিচ থেকে বেরিয়ে আসে নীলচে আগুন। পুলিশ ভদ্রলোক ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন নরম মাটির উপর চারটি গভীর গর্ত। সেই রহস্যময়যানের চার পায়ের দাগ। সেই বছরই ওকলাহোমার নিকটবর্তী কোথাও গিয়েছিলেন এক ভদ্রলোক। তিনি সপরিবারে পিকনিক করবেন। পিকনিকে তিনি তার মেয়ের ছবি তোলেন, ছবি পজিটিভ হলে তিনি দেখেন তার মেয়ের ছবির পেছনে মাথা তুলে অদ্ভূত পোষাকের এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দেখেন, সেই লোকের পোশাক আসলে একজন নভোচারীর পোশাক, সারা শরীরে সাদা রঙের ধাতব পোশাক। চোখের দিকটা কালো কাঁচে ঢাকা। তিনি ঐ দিনের সমস্ত পত্রিকা তন্ন তন্ন করে খুঁজেন। অবশেষে দেখতে পান- ঐ দিন ওকলাহোমার আকাশে ইউফো দেখা গেছে। তবে সর্বাপেক্ষা চাঞ্চল্যকর ইউফো দেখার ঘটনা ঘটে পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে ১৯৪৭ আর ১৯৯৭ সালে। ১৯৪৭ সালের ২৪ জুন।
কেনেথ আর্নল্ড নামে এক বৈমানিক ওয়াশিংটনের চেহলিস বিমানবন্দরে তার নিজস্ব বিমান নিয়ে আকাশে ওড়েন। একটি হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজে তল্লাশিরত এক অনুসন্ধানকারী দলকে তিনি সাহায্য করতে গিয়েছিলেন। কাসকেট পাহাড়ের সাথে সংঘর্ষে সেই বিমানটি ভেঙ্গে পড়েছিলো। ১২ হাজার ফুট উঁচুতে পাহাড়ে ছিলো সেই ধ্বংসাবশেষ। পাহাড়ের কাছে গিয়ে কেনেথ আর্নল্ড দেখতে পেলেন চাকতির মতো কয়েকটা অদ্ভুত জিনিস উড়ে যাচ্ছে পাহাড়ের চুড়া ঘেঁষে। সাথে সাথে উত্তেজিত কেনেথ কন্ট্রোল টাওয়ারে সংবাদ পাঠালেন। তিনি ৯টি উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পেলেন।
কন্ট্রোল টাওয়ারে রেকর্ড হয়ে গেল-‘সাংঘাতিক উজ্জ্বল একটা আলো হঠাৎ ঝলকে উঠে আকাশটাকে আলোয় আলোকিত করে দিলো। সেই আলোয় আমার বিমানের ভেতরটা ঝলমল হয়ে উঠলো। কোনকিছুর বিস্ফোরণে যেমন ঝলক দেয়, ঐ আলোর ছিলো নীলাভ সাদা আভা। প্রথমে ভেবেছিলাম সামনে দিয়ে উড়ে যাওয়া কোন সামরিক বিমানের গায়ে আলোকরশ্মি টিকরে পড়ে ঐরকম হয়েছে। তখন চারপাশ আবার ভালোমত দেখছিলাম। পর মূহুর্তেই দেখলাম-পাহাড়ের চূড়ার কাছাকাছি প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ফুট উঁচুতে সারিবদ্ধ হয়ে উড়ে যাচ্ছে ৯/১০টা জিনিস। সেগুলো দেখতে চাকতি ও পিরিচাকৃতির। একটু এলোমেলোভাবে প্রচন্ড গতিতে উড়ছে এই বস্তুগুলো। টানা তিন মিনিট ধরে তাদের দেখলাম। তার আগে এত দ্রুত গতির কোন বস্তু দেখিনি।’
পরে এক টিভি সাক্ষৎকারেও তিনি একথা বলেছিলেন, পুরো পৃথিবীজুড়ে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। অন্য দেশ থেকে আসে একই রিপোর্ট। পর্যালোচনা করে দেখা গেলো-একটা পিরিচাকৃতির বস্তু অর্ধপৃথিবীজুড়ে একটা বিশেষ রুটে ঘুরে বেড়িয়েছে। ১৯৯৭ সাল, ৫০ বছর পর ৫ মার্চ আরিজোনার রাজধানী ফিনিক্সে গ্রীষ্মকাল চলছে। মরুভূমির উষ্ণ হাওয়া জনজীবনকে করেছে কিছুটা স্তম্ভিত। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ফিনিক্সের আকাশে একটা ত্রিকোণাকৃতির, ঠিক ত্রিকোণাকার নয়, বুমেরাং আকৃতির আকাশযান উড়ে যেতে দেখা যায়। তার চার ঘন্টা পর পাহাড়ের উপরে বিশাল একটি মহাকাশযান দেখা গেল। প্রায় ১০০ লোক হোমভিডিও দিয়ে এই মহাকাশযানের ছবি তোলেন। এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। স্থানীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা এতে যোগ দেন, তবে ঐ দিন বিমানবাহিনী দাবি করে তারা আরিজোনার ফিল্ড বেস হতে রুটিন ট্রেইনের অংশ হিসেবে ফ্লেয়ার ফেলেছিলো বিমান হতে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দাবি করেন ফ্লেয়ার চারপাশ আলোকিত করে।
তারা যে মহাকাশযানের মত বস্তু দেখেছিলেন তা চারপাশ আলোকিত করেনি। তবে কম্পিউটারে দেখা যায়, ফেয়ার যদি বিমান হতে প্রকৃতপক্ষে ফেলা হয়, তাহলে পাহাড়ের পেছনে অবতরণ করার কথা এবং তত্ত্বানুসারে তা হয়েছেও। তাই আসলে সেটা কী আমাদের জানতে অনেক সময় লাগতে পারে, হয়তো কোনদিনই জানতে পারবো না।
তদন্ত ও গবেষণা :-
এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সোভিয়েত আর্মি, ইউএস আর্মি, ব্রিটিশ আর্মি এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক কমিটির পক্ষ থেকে গবেষণা কমিটি গঠিত হয়। এ বিষয়ে তিনটি গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব পাওয়া গেছে। সেগুলো হলো:
১. এগুলো (ইউফো) আসলে একটা ষড়যন্ত্র বা কন্সপেরিসি। এগুলো মার্কিন সরকারের তৈরি কিংবা সোভিয়েত সরকারের তৈরি সুপারসনিক কিংবা হাইপারসনিক বিমান। এরকম দ্রুতগতির বিমান আমেরিকা তৈরি করতে সক্ষম এবং রাডারকে তা ফাঁকি দিতে পারে। ‘এফ-১১৭ নাইট হক’ এ ধরণের বিমান। এছাড়া নাসাও এ ধরণের বিমান তৈরি করছে।
২. দ্বিতীয় থিওরিটি হচ্ছে এটি বহির্জাগতিক বুদ্ধিমান প্রাণীদের দ্বারা তৈরিকৃত ও পরিচালিত। এটি নিঃশব্দে চলতে পারে। ১৯৭৮ সালে ফ্রায়েরিখ ভ্যালেনটিচ নামে এক লোক মেলবোর্নের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলেন। সমুদ্রের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তার উপর এলো একটি সবুজাভ চুরুটাকৃতির আকাশযান। সেটি তার আকাশযানকে কেন্দ্র করে ঘুরছিলো, কন্ট্রোলারকে এসব জানিয়েই তিনি নিখোঁজ হয়ে গেলেন। ১৯৮৯ সালে চারজন লোক দাবি করলো- তারা একটি বিমানকে একটি চুরুটাকৃতির ‘স্পেশশিপ’ ফলো করে নিয়ে যেতে দেখেছে। তারা আকাশযানটিকে স্পেশশিপ বলে অভিহিত করে, কারণ ওটার গঠন বৈশিষ্ট্য ছিলো অনন্য। বাইরের খোলস সম্ভবত অভ্রের আবরণে আবৃত। একটি সাদা ও সবুজ আলোর বৃত্ত ওটাকে ঘিরে রেখেছে। এটা অতি উন্নত সভ্যতার উদাহরণ। মানুষের চেয়ে কমপক্ষে ১০হাজার বছরের অগ্রগামী যে সভ্যতা। কেননা, ২১৬ খ্রীষ্টপূর্বে রোমেও ফ্লাইং সসার দেখা গিয়েছিলো। তাহলে যিশু খ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে তারা (ভিনগ্রহীরা) আকাশবিদ্যা ও মহাকাশবিদ্যা অর্জন করেছিলো! আবার তারা আন্তঃনাত্রিক যোগাযোগ স্থাপনেও সক্ষম হয়েছিলো! কারণ আমাদের সৌরজগতে এখনও প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের নিকটবর্তী তারকা প্রক্সিমা সেন্টারাই ৪.২২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
৩. তৃতীয় থিউরিটি হলো-এটি একটি ইলুউশন। ১৯৪৮ সালে মার্কিন বিমানবাহিনীতে এ নিয়ে তদন্ত প্রকল্প শুরু হলো। তার নাম হলো Project Blue Book. তখন থেকেই চালু হলো ইউএফও (বা ইউফো)। দিনে ও রাতে নানা সময়ে সেগুলো দেখা গেছে। অনেকে ছবি তুলেছে তাদের। সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বললেন, ৯০% ইউফো হলো একদম জানা জিনিস। মানুষ ভুলভাবে সেগুলোর ব্যাখ্যা করেছে। যেমন অনেক উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া জেট প্লেনের গায়ে ঠিকরেপড়া সূর্যের আলো কিংবা বাতাসে তাপমাত্রার জটিল পরিবর্তনে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু বিষয়কে ইউফো বলে চিহ্নিত করা হয়।
তবে ১৯৬০ সালে কী নেমেছিলো নরম্যানের সামনে ? কী দেখেছিলেন ১৯৬৪ সালে সেই পুলিশ অফিসার ? কে বা কারা তৈরী করে উড়ন্ত চাকতি ? কেনই বা ‘AREA 51’ এতো গোপনীয় ? মানুষ একদিন ঠিকই এর উত্তর বের করবে।


জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ


উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা আর নেই। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মুম্বাইয়ের আন্ধেরির কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভূপেন হাজারিকার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
ভূপেন হাজারিকা শ্বাসকষ্ট ও কিডনি রোগে ভুগছিলেন। পাঁচ মাস ধরে তিনি মুম্বাইয়ের হাসপাতালে চিকিত্সা নিচ্ছিলেন। গত মঙ্গলবার তাঁর ডায়ালাইসিস হলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। ডায়ালাইসিসেও সাড়া দিচ্ছিল না তাঁর শরীর। তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছিল। শেষ সময়ে পাশে ছিলেন তাঁর দীর্ঘ দিনের সঙ্গী কল্পনা লাজমি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরই ভূপেন হাজারিকার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সে সময় তাঁর দেহে ছোটখাটো অস্ত্রপচারও করা হয়। গত ২৯ জুন থেকে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলেন। 
১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আসামের সাদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ভূপেন হাজারিকা। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমিয়া ছবিতে গান করেন


ভূপেন হাজারিকার জন্ম ভারতের অসম রাজ্যের সাদিয়ায়। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে গান লিখে সুর দিতে থাকেন হাজারিকা। ১২ বছর বয়সে তালকি ও ইন্দ্রমালতী নামে দুটি অসমিয়া ছবিতে গান গেয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। ১৯৪২ সালে গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। অতঃপর বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (১৯৪৪) এবং পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ (১৯৪৬ পাস করেন। ১৯৫৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।
ভূপেন হাজারিকা একাধারে ছিলেন গায়ক, কবি, সাংবাদিক ও লেখক। অসমিয়া ভাষা বাদেও তিনি বাংলা, হিন্দিসহ একাধিক ভাষায় গান করেছেন। ভূপেন হাজারিকা তাঁর এই বর্ণাঢ্য জীবনে পদ্মভূষণ, দাদা সাহেব ফালকেসহ একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০০৯ সালে আসামের প্রধান সফর গুয়াহাটির কেন্দ্রস্থলে তাঁর মূর্তি বসানো হয়। তিনি এই মূর্তির আনুষ্ঠানিক পর্দা উন্মোচন করেছিলেন।

তার কিছু বিখ্যাত গান তুলে ধরা হলঃ

১। মানুষ মানুষের জন্য

মানুষ মানুষের জন্য
জীবন জীবনের জন্য
একটু সহানুভূতি কি
মানুষ পেতে পারে না…ও বন্ধু।।
মানুষ মানুষকে পণ্য করে,
মানুষ মানুষকে জীবিকা করে,
পুরোনো ইতিহাস ফিরে এলে
লজ্জা কি তুমি পাবে না…ও বন্ধু।।
বলো কি তোমার ক্ষতি
জীবনের অথৈ নদী
পার হয় তোমাকে ধরে
দুর্বল মানুষ যদি।
মানুষ যদি সে না হয় মানুষ
দানব কখনো হয় না মানুষ
যদি দানব কখনো বা হয় মানুষ
লজ্জা কি তুমি পাবে না…ও বন্ধু।।


২। জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ

জয় জয় নবজাত বাংলাদেশ,
জয় জয় মুক্তিবাহিনী
ভারতীয় সৈন্যের সাথে রচিলে
মৈত্রীর কাহিনী।।

ধর্মান্ধতার বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষতা,
বিভেদগামী শক্তির বদলে
গঙ্গা পদ্মার একতা,
বিশাল ভলগা, গঙ্গা-পদ্মার
পাড় ভেঙ্গে এক হল পানি।।

সামন্ততন্ত্রের বিপরীতে, এক নতুন প্রজাতন্ত্র,
সমরতন্ত্রের বিপরীতে,
এক অভিনব সমাজতন্ত্র,
স্থাপনা করে রক্তে লিখিলে
শেখ মুজিবরের বাণী।।


৩। সিন্ধু থেকে পদ্মা-গঙ্গা-মেঘনা

এই গঙ্গা আমার মা-ওই পদ্মা আমার মা
কেন, হারিয়ে যাওয়া সিন্ধু মাকে ফিরে পেলামনা!

এপারে উদাসী বাউল বাজায় একতারা-
ওপারের ভাওয়াইয়া গানে বাজে দোতরা
কেন,রাখালিয়া বাঁশিতে সুর শুনতে পেলামনা!

কোথায় আমার হারিয়ে যাওয়া মেঘনা নদীর কূল
মন উদাসী বাঁশির সুরে হতাম যে ব্যাকুল
কেন,রূপসা নদীর পারে আমার ফেরা হ‌লনা!

সিন্ধুপারে আজও ডাকে বন্ধু আমার
হাসান ও জিনাতকে মনে পড়ে বারেবার
কেন,সিন্ধুপারের বন্ধু আমার ফিরে এলনা!
৪। মেঘ থম থম করে কেউ নেই

মেঘ থম থম করে কেউ নেই
জল থই থই করে কিছু নেই
ভাঙনের যে নেই পারাপার
তুমি আমি সব একাকার
মেঘ থম থম করে কেউ নেই।

কোথায় জানিনা, মেঘ ছিল যে কোথায়?
সীমানা পেরিয়ে সব মিশে যেতে চায়
মেঘ থম থম করে কেউ নেই
জল থই থই করে কিছু নেই
আঁধারের যে নেই পারাপার
মেঘ থম থম করে কেউ নেই।

পুরানো সব নিয়ম ভাঙে অনিয়মের ঝড়
ঝড়ো হাওয়া ভেঙে দিল মিথ্যে তাসের ঘর।
নুতন মাটিতে আসে ফসলেরই কাল
আঁধার পেরিয়ে আসে আগামী সকাল।

রাত ঘুম ঘুম ভোরে জাগে ঐ
রোদ ঝলমল করে দেখ ঐ
বাতাসের যে নেই হাহাকার
পথ নেই যে পথ হারাবার
রাত ঘুম ঘুম ভোরে জাগে ঐ।