আগামীকাল বুধবার (১৫ জুন) পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। বাংলাদেশের সর্বত্র গ্রহণটি দেখা যাবে। রাত ১১টা ২৪ মিনিটে শুরু হবে গ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায়। ১২টা ২৩ মিনিটে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে তা পূর্ণতা পাবে রাত ২টা ১২ মিনিটে। চন্দ্রগ্রহণটি ১০০ মিনিট স্থায়ী হবে। পূর্ণ গ্রহণ শেষ হবে ভোর ৪টা ২ মিনিটে এবং ভোর ৫টায় এর উপচ্ছায়া শেষ হবে।
বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এটাই হবে এ বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ। বছরের দ্বিতীয় গ্রহণটি হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। আগামীকাল হতে যাওয়া বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর আগে ২০০০ সালের ১৬ জুলাই এ রকম ১০০ মিনিট স্থায়ী চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই আবার এ রকম গ্রহণ দেখা যাবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণে অনুসন্ধিৎসু চক্র ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার প্রাঙ্গণে খোলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প। দর্শনার্থীদের জন্য উš§ুক্ত এ ক্যাম্প বুধবার বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে সারা রাত চলবে। ক্যাম্পটিতে অপটিক্যাল টেলিস্কোপ ছাড়াও রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকছে। এ ছাড়া দেশের আরো ২০টি স্থানে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প খোলা হচ্ছে। অনুসন্ধিৎসু চক্র বাংলাদেশের এই চন্দ্রগ্রহণের ভিডিও, ছবি ও তথ্য সরাসরি http://www.astronomylive.com এই ঠিকানার ওয়েবসাইটে প্রচার করবে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানে গ্রহণ (ইংরেজি ভাষায়: Eclipse এক্লিপ্স্) বলতে একটি খ-বস্তুর কারণে অন্য একটি খ-বস্তুর আংশিক বা পূর্ণরূপে আড়াল হওয়াকে বোঝায়। যখন তিনটি খ-বস্তু একই সরলরেখায় অবস্থান করে, তখন তাদের মধ্যে একটি খ-বস্তু থেকে বাকী দুইটি খ-বস্তুর মধ্যে সংঘটিত গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করা যায়। যে খ-বস্তুটি আড়াল করে, তাকে বলে গ্রহণকারী খ-বস্তু। আর যে খ-বস্তুটি আড়ালে চলে যায়, তাকে বলে গ্রহণকৃত খ-বস্তু।
যেমন - যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চাঁদ অবস্থান নেয়, তখন পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে সূর্য চাঁদের পেছনে আড়ালে চলে যায় এবং সূর্যের গ্রহণ ঘটে। আবার পৃথিবী যখন চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে আসে তখন পৃথিবীর আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়ে এবং চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণ সূর্যে অবস্থিত কাল্পনিক পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে ঘটলেও, চাঁদের দিকে মুখ করে থাকা পৃথিবীপৃষ্ঠের মানুষেরাও এই চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, কেননা সূর্য একটি তারা বলে তার আলো পৃথিবীতে বাধা পায় এবং চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ হল একটি তারা ও দুইটি অন্য ধরনের জ্যোতিষ্ক নিয়ে গঠিত ব্যবস্থায় সংঘটিত গ্রহণ।
এছাড়া প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপগ্রহগুলি যখন তাদের গ্রহের পেছনে চলে যায়, তখন পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে তাদেরও গ্রহণ ঘটে।
একটি যুগ্ম তারা ব্যবস্থার কক্ষপথের তল পৃথিবীর মধ্য দিয়ে বা খুব কাছাকাছি অতিক্রম করলে পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে পর্যায়বৃত্তভাবে একটি তারা অপরটির গ্রহণ ঘটায়। এই ধরনের গ্রহণ হল দুইটি তারা ও একটি অন্য ধরনের জ্যোতিষ্ক নিয়ে গঠিত ব্যবস্থায় সংঘটিত গ্রহণ।
যখন গ্রহণকারী বস্তুর আপাত আকার গ্রহণকৃত বস্তুটির আপাত আকারের চেয়ে অনেক বড় হয়, তবে সেই ঘটনাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিশেষ পরিভাষায় "অদৃশ্যকরণ" (occultation অকাল্টেশন) বলে। যেমন - চাঁদের পেছনে দূরের কোন তারা, নীহারিকা বা গ্রহের সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যাওয়া, অথবা কোন প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপগ্রহের কিংবা অনুসন্ধানী মহাকাশযানের সৌরজগতের কোন খ-বস্তুর পেছনে সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যাওয়া।
যখন অপেক্ষাকৃত ছোট একটি খ-বস্তু অনেক বড় একটি খ-বস্তুর সামনে দিয়ে চলে যায়, এবং খুব ছোট আকারের গ্রহণ ঘটে, তখন তাকে গ্রহণ না বলে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় "অতিক্রম" (transit ট্রানজিট) বলে। বুধ ও শুক্র গ্রহ দুইটি প্রায়ই সূর্যকে এ অর্থে "অতিক্রম" করে। ছোট উপগ্রহগুলি তাদের নিজ নিজ গ্রহগুলিকে "অতিক্রম" করতে পারে।
আরও দেখুন
1. উইকিপিডিয়া
2. কালের কণ্ঠ ওয়েব
No comments:
Post a Comment