Make our mind vaster than space

Make our mind vaster than space
Milky Way Galaxy

Wednesday, June 22, 2011

শ্যালো ইঞ্জিন কেড়ে নিল রুবিনা নামের সম্ভাবনা

পান্না বালা, ফরিদপুর

বড় সদালাপী ছিল মেয়েটি। ছিল সবার সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার গুণ। বাবা স্বপ্ন দেখতেন, কয়েক বছর পর মেয়ে চিকিৎসক হবে, মানুষের সেবা করবে, গর্বে ভরে যাবে তাঁর বুক। কিন্তু সে স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে রুবিনা পারভীন (১৯) হারিয়ে গেছেন চিরতরে। গত সোমবার শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ অটোবাইকের ইঞ্জিনে ওড়না আটকে শ্বাসরোধে মারা গেছেন তিনি।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী (১৯তম ব্যাচ) ছিলেন রুবিনা। ছিলেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন ফরিদপুর মেডিসিন ক্লাবের সহ-পরিসংখ্যান সম্পাদক। বাড়ি কুমিল্লা শহরের হারুন স্কুল রোডে। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আবদুল হক। তিন বোনের মধ্যে রুবিনা ছিলেন ছোট।
রুবিনার সহপাঠী সাবরিনা আফরোজ জানান, সোমবার বেলা একটার দিকে রুবিনাসহ তাঁরা চারজন সহপাঠী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ছাত্রীনিবাস থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন। ব্যাটারিচালিত অটোবাইকের মতো দেখতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি গাড়িতে চড়েছিলেন তাঁরা। নার্সিং ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে আসার পর রুবিনার গলায় পেঁচানো ওড়নার এক প্রান্ত গাড়ির দুই আসনের ফাঁক দিয়ে ইঞ্জিনে গিয়ে আটকে যায়। এতে গলায় চাপ লেগে শ্বাসরোধে অচেতন হয়ে পড়েন রুবিনা। তাঁকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রুবিনাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঠানো হয়। সঙ্গে যান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম ও অবেদনবিদ অনন্ত।
চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার পথে রুবিনার হূৎস্পন্দন দুই দফা থেমে গেলেও আমরা সচল করতে পারি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে রুবিনার মৃত্যু হয়।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ‘গলায় পেঁচানো ওড়না অটোবাইকের ইঞ্জিনে আটকে যাওয়ায় রুবিনার সার্ভিকেল স্পাইন বিচ্যুত হয়। এতে রুবিনার স্পাইনাল কর্ড ও মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। ফলে রুবিনা অচেতন হয়ে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি স্বপ্নের মৃত্যু, একটি সম্ভাবনার মৃত্যু। আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত।’
রুবিনার মরদেহের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র মো. আতিকুজ্জামান। তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে রুবিনার বাড়িতে পৌঁছান তাঁরা। শোকে নির্বাক ছিলেন রুবিনার বাবা মো. আবদুল হক। তাঁর চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছিল। মা সালেহা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, ‘মেয়েকে ডাক্তার বানাইতে ফরিদপুর পাঠাই, সেখান থেকে ও লাশ হইয়া ফিরা আসল’।
জোহরের নামাজের পর দুটি জানাজা শেষে কুমিল্লা শহরের চানপুর বেবিস্ট্যান্ডসংলগ্ন কবরস্থানে রুবিনাকে দাফন করা হয়।
রুবিনার স্মরণে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে গতকাল থেকে তিন দিনের শোক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শোকসভার আয়োজন করা হয়েছে। রুবিনার সহপাঠীরা বলেন, ওর স্বপ্ন ছিল কার্ডিওলজিস্ট (হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ) হওয়া। সহপাঠী কাজী ফাহমিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘রুবিনা খুব মিশুক ছিল। পড়াশোনায়ও খুব ভালো ছিল।’ রুবিনার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ফরিদপুর মেডিসিন ক্লাব।
ফরিদপুরে মহাসড়কে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আক্কাস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরে নগরকান্দা উপজেলার কিছু অটোবাইক শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হয়। ব্যাটারিচালিত অটোবাইক পরিবেশবান্ধব হলেও শ্যালো মেশিনচালিত বাইক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এবং ত্রুটিযুক্ত। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের বাইক বন্ধ করা দরকার।’
জেলা প্রশাসক হেলালুদ্দীন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জানা ছিল না, শহরের অটোবাইকে শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শ্যালো মেশিনচালিত বাইকগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে।’


No comments:

Post a Comment