ভিক্টোরিয়া হ্রদ আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ । ক্ষেত্রফলের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির আধার । তবে গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি পানির আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম । তানজানিয়া , কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যবর্তী একটি সুউচ্চ মালভূমির উপর এটি অবস্থিত । এ হ্রদে প্রায় ৩০০০ টি ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে , যার অনেকগুলোতেই মানব বসতি রয়েছে ।নীল নদ এর দীর্ঘতম উৎস সাদা নীলের উৎপত্তি এ হ্রদ থেকেই।
ভিক্টোরিয়া তুলনামূলকভাবে নবীন একটি হ্রদ । বর্তমান জলাধারটি সৃষ্টি হয় ৪,০০,০০০ বছর পূর্বে।১৭,৩০০ বছর পূর্বে এটি পুরোপুরি শুকিয়ে যায় । ১৪,৭০০ বছর পূর্বে এটি পুনরায় ভরে উঠে।
ভিক্টোরিয়া হ্রদের কথা প্রথম শোনা যায় আরব বণিকদের বিবরণীতে । সোনা , হাতির দাঁতের খোঁজে আরবরা আফ্রিকার অভ্যন্তরে নৌপথগুলো ব্যবহার করতো ।১১৬০ সালের একটি আরব মানচিত্রে ভিক্টোরিয়া হ্রদকে সুস্পষ্টভাবে সঠিক অবস্থানসহ চিহ্নিত করা হয়।
১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ অভিযাত্রী জন হানিং স্পেক(John Hanning Speke) মধ্য আফ্রিকায় অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে সর্বপ্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীরে উপস্থিত হন । বিশাল জলরাশি দেখে তার মনে হয় , এটিই নীল নদের উৎস । মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামানুসারে তিনি এটির নামকরণ করেন ।
ব্রিটিশ মিশনারী ও অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন(David Livingstone) স্পেকের দাবীর সত্যতা যাচাই করতে ব্যর্থ হন । তিনি আরও পশ্চিমে কংগো নদীর কাছে পৌঁছান ।অবশেষে আমেরিকান আবিষ্কারক হেনরি মরটন স্ট্যানলি(Henry Morton Stanley) এর সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হন।
এদিকে এক ধরনের কচুরিপানার ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে আফ্রিকার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া হ্রদ সম্পূর্ণ মজে যেতে বসেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে ব্রাইট জানিয়েছেন, এই কচুরিপানার জন্য ভিক্টোরিয়া হ্রদের পার্শ্ববর্তী তিনটি দেশ কেনিয়া, উগান্ডা এবং তাঞ্জানিয়ায় ব্যাপক মানবিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
মানবসৃষ্ট ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে ভিক্টোরিয়া হ্রদের জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ।মৎস্য সম্পদ থেকে আয় বাড়াতে ১৯৫৪ সালে হ্রদে নাইল পার্চ মাছ ছাড়া হয় । ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এরা হ্রদে সীমিত আকারে ছিল । কিন্তু পরবর্তী সময়ে এদের ব্যাপক বংশবিস্তার ঘটে । একই সাথে হ্রদে নাইল তেলাপিয়া ছাড়া হয় । বন ধ্বংস করা , অতিরিক্ত জনসংখ্যার পাশাপাশি এ মাছগুলোর আধিক্য হ্রদের জীব বৈচিত্রকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে । বহু অণুজীব প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে ।
ন্যালিউবেল বাঁধঃ ভিক্টোরিয়া হ্রদের একমাত্র বহির্গামী উৎস উগান্ডার জিনজা তে অবস্থিত । প্রাকৃতিক একটি বাঁধের মাধ্যমে বহির্গামী পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রিত হত । ১৯৫২ সালে পানি প্রবাহ বাড়াতে ব্রিটিশ ঔপেনিবেশিক প্রকৌশলীরা প্রাকৃতিক জল সংরক্ষণাগারটি ধ্বংস করে দেন ।
২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উগান্ডা নীল নদীতে বাঁধ দিয়ে দ্বিতীয় জল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করে ।এরপর হ্রদের পানিস্তরের উচ্চতা ৮০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে আসে । কেনীয় বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান করে দেখেন , চুক্তি ভঙ্গ করে উগান্ডা দ্বিগুণ পরিমাণ পানি ছেড়ে দিচ্ছে ।
১৯ শতকের শুরু থেকই লেক ভিক্টোরিয়া ফেরি সার্ভিস তানজানিয়া , কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম ।প্রধান বন্দরগুলোর মধ্যে আছে কিসুমো , জিনজা , পোর্ট বেল ।
১৯৯৬ সালের ২১ মে বুকোবা ফেরি ডুবে ৮০০ জন লোক মারা যান। এটি ছিল তানজানিয়ার রেলওয়ে সার্ভিসের ফেরি।
উগান্ডার তানজানিয়ার রেলওয়ে সার্ভিসের ৩টি ফেরি আছে। কাবালেগা,কাও্যা এবং পেমবা।
২০০৫ সালের ৮ মের ভোরবেলা কাবালেগা এবং কাও্যার ভিতর মুখোমুখি সংঘর্ষ হল। সৌভাগ্যবশত কারও ক্ষতি হয়নি।
২০০৬ এর ২৮ এপ্রিল এম ভি ন্যামাগেনি নামে এক কার্গোশিপ ডুবে ২৮ জন নিহত হয়।
No comments:
Post a Comment