|
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অনিদ্রা ছিল বিশ্বের প্রধান সমস্যা। থালিডোমাইড তখন আবির্ভূত হয় ঘুমের ঔষধ হিসেবে। সে সময় প্রতি ৭ জন আমেরিকানের ভিতর ১ জন নিয়মিত এই ঔষধ সেবন করত। ইউরোপের বাজারে এই নন বারবিচুরেটটির চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তখন এই ঔষধটি বাজার দখল করে নিল।
Over-the-counter remedy হিসেবে এই ঔষধটি ১৯৫৭ তে জার্মান বাজারে প্রবেশ করে। অর্থাৎ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঔষধটি কেনা যেত এবং ব্যবহার করা যেত। প্রস্তুতকারীর দাবি ছিল ঔষধটি নিরাপদ এমনকি গর্ভবতী মহিলারাও এটা ব্যবহার করতে পারবেন। প্রস্তুতকারী আরও দাবি করল থালিডোমাইডের এমন কোন ডোস পাওয়া যায় নি যা একটা ইঁদুরকে মারতে পারে। ১৯৬০ সালের ভিতর প্রায় ৪৬ টি দেশে থালিডোমাইড বাজারজাত করা হল। এর বেচাকেনার হার প্রায় অ্যাসপিরিনের কাছাকাছি চলে গেল।
এই সময় অস্ট্রেলিয়ান প্রসুতিবিদ ডা উইলিয়াম মাকব্রাইড আবিষ্কার করলেন থালিডোমাইড গর্ভবতী মহিলাদের মর্নিং সিকনেসে ভালো কাজ করে। এরপর গোটা বিশ্বে থালিডোমাইড গর্ভবতী মহিলাদের মর্নিং সিকনেসের জন্য প্রেসক্রাইব করা শুরু হল।
কিন্তু ১৯৬১ সালে ডা উইলিয়াম মাকব্রাইড নিজেই সন্দেহ করতে লাগলেন এই থালিডোমাইডের সাথে তার হাতে জন্ম নেওয়া সদ্যজাত শিশুদের জন্মগত সমস্যার সম্পর্ক।
১৯৬১ সালে জার্মান সংবাদপত্রগুলো এইরকম ১৬১ টি কেসের কথা জানায় এবং জার্মানি হতে ঔষধটি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৬২ সালের মার্চের ভিতর অধিকাংশ দেশ নিষিদ্ধ করে ঔষধটি।
কেউ বলতে পারে না কত বাচ্চা এই ঔষধটির শিকার হয়েছিল। এটা ধারণা করা হয় ১০০০০ হতে পারে এর শিকার।
আমেরিকাতে ফুড অ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ত্রেসনের ফার্মাকোলজিস্ত এবং এমডি Frances Oldham Kelsey থালিডোমাইডের বাজারজাতকরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যদিও থালিডোমাইড আমেরিকাতে সরকারিভাবে বাজারজাত কখনও হয় নাই এটা লক্ষ লক্ষ লোক নিজেরা সংগ্রহ করে খেত।
Kelsey এই কারণে ১৯৬২ সালে জন এফ কেনেডির কাছ থেকে পুরস্কার পান।
১৯৬২ সালে ইউ এস কংগ্রেস আইন পাস করে যে কোন ড্রাগ প্রেগনেন্সিতে ব্যবহারের জন্য বাজারজাতকরনের পূর্বে পরীক্ষা বা ট্রায়াল করে দেখতে হবে।
থালিডোমাইডের ভয়ংকর প্রভাব হচ্ছে গর্ভবতী মহিলারা এটি গ্রহন করলে পরে দেখা যায় জন্ম নেওয়া সন্তানদের হবে ফকোমালি নামক একটি বিকাশবিকৃতিজনিত রোগ বা কঞ্জেনিটাল ডিসিস যেখানে কিনা হাত-পাগুলো হয় স্বাভাবিকের চেয় অনেক ছোট এবং অঙ্গুলগুলোর বিকাশও স্বাভাবিক হয় না, কান ও অন্ত্রের বিকাশও হয় অস্বাভাবিক। ভ্রুনগতবিকাশবিকৃতির অনুঘটক রাসায়নিককে বলা হয় টেরাটোজেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে থালিডোমাইডের টেরাটোজেনিসিটির উতস কি? দেখা যায় যে, টোটাল সিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় কারখানায় সংশ্লেষিত থালিডোমাইড ধারণ করে আর ও এস এনান্টিওমারের অর্ধক অর্ধেক অনুপাত, একটি আইসোমার টার্গেট ইনহিবিট করে এবং অপরটি ইনহিবিট করে সম্পুর্ণই নতুন ও অনাকাঙ্খিত একটি টার্গেট যেই টার্গেটটি কিনা হাত-পা এর বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
থালিডমাইড টেরাটোজেন গর্ভধারণের ৩ থেকে ৫ সপ্তাহের মধ্যে, এরপর থালিডমাইড সম্পুর্ণই নিরাপদ।
তাই বাজার থেকে তুলে নেওয়া থালিডোমাইড আবার বাজারে প্রবেশের অনুমতি পায় এবং এখন এটি ব্যাবহার হচ্ছে মেলানোমা বা চামড়ার ক্যান্সার চিকিতসায় ১৯৯৮ সালের ১৬ জুন।
No comments:
Post a Comment