Make our mind vaster than space

Make our mind vaster than space
Milky Way Galaxy

Saturday, October 1, 2011

পাঁচগাঁওের লাল দুর্গা

পাঁচগাঁওের লাল দুর্গা ছবিঃ বাংলানিউজ২৪ এর সৌজন্নে




কাল থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। ১৪আশ্বিন ১৪১৮বাংলা ও ২অক্টোবর ২০১১ রোববার রাতে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠী পুজার মাধ্যমে দেবীর বোঁধন,আমন্ত্রণ ও অধিবাস। ১৫আশ্বিন,৩অক্টোবর সোমবার শারদীয় দূগাদেবীর নব পত্রিকায় প্রবেশ, স্থাপন,সপ্তম্যাদি,কল্পারন্ত বিহিত পূজা প্রশস্তা। ১৬আশ্বিন, ৪অক্টোব মঙ্গলবার দুর্গাদেবী মহাঅষ্টমী কল্পারম্ব পূজা,দেবীর অদ্ধরাত্র বিহিত,সন্ধি পূজা-বলিদান ও ও সন্ধি পূজা সমাপন। ১৭আশ্বিন,৫অক্টোবর বুধবার মহানবমী কল্পারম্ব ও মহানবমীর বিহিত পূজা প্রশস্তা। ১৮আশ্বিন,৬অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুর্গাদেবীর দশমী বিহিত পূজার সমাপনান্তে বির্সজ্জন। সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা।

“ দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।

- ‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা।

দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব  দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হওয়া বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধানে আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষে এবংচৈত্রমাসের শুক্লপক্ষে দুর্গোৎসব পালন করা যায়। চৈত্র অর্থাৎ বসন্তকালের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা ও আশ্বিন অর্থাৎ শরৎকালের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। বাংলায় শারদীয়া দুর্গাপূজা অধিক জনপ্রিয়। অনেক পরিবারে বাসন্তী দুর্গোৎসব পালনের প্রথাও বর্তমান।
পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় এই উৎসবের জাঁকজমক সর্বাধিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের হিন্দু সম্প্রদায়ও বিশেষ উৎসাহে এই উৎসব পালন করে থাকেন। এমনকি অসম ও ওড়িশাতেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে। বর্তমানকালে পাশ্চাত্য, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশগুলিতে  বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা কর্মসূত্রে অবস্থান করেন, সেখানেও মহাসমারোহে দুর্গোৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। এই কারণে সারা বিশ্বের কাছেই বর্তমানে বাংলার অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে দুর্গোৎসব। ২০০৬ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হল-এভয়েসেস অব বেঙ্গল সিজন নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসাবে বিরাট দুর্গোৎসবের আয়োজন করেন স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীবৃন্দ ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। এই একই সময়ে অবাঙালি হিন্দুরা নবরাত্রি পালন করে যা শক্তির উপাসনা। নবরাত্রিতে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের পূজা করা হয়। দশম দিন বিজয়া দশমী উদযাপন করা হয়।

প্রাচীন কাল থেকেই প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে পাঞ্জাবের হরপ্পা ও সিন্ধুর মহেঞ্জোদারোতে দেবীর পূজা হতো। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং দেবীর পূজা করেছেন। ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় তৎকালীন শ্রীহট্ট(বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট) এর রাজা গনেশ পঞ্চদশ শতকে প্রথম মূর্তিতে দূর্গা পূজা করেন। ষোড়শ শতকে রাজশাহী অঞ্চলের রাজা কংশনারায়ন দুর্গা পূজা করেন। অষ্টাদশ শতকে নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র দুর্গা পূজা করেন। 


 ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে রোববার মৌলভীবাজারে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে শুরু হচ্ছে উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গাদেবীর  পূজা।

‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাড়া তিনশ’ বছরের কাছাকাছি সময় ধরে ব্যতিক্রমী এই পূজা আয়োজন হয়ে আসছে।

দেশের আর কোথাও লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা নেই। প্রতি বছর ষষ্ঠী থেকে দশমীর বিসর্জনের দিন পর্যন্ত পাঁচ দিনে দেবী দর্শনে লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে এখানে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের পদচারণায় নিভৃত গ্রামটি হয়ে ওঠে কোলাহল মুখর। 

উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, ময়মনসিংসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন দেবী দর্শনের জন্য। 

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে পাঁচগাঁও নামক স্থানে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গা পূজা। সিলেট বিভাগ মতান্তরে দেশের অন্যতম একটি লাল দুর্গা মণ্ডপ এটি।

পূজা শুরু হলে রাজনগর উপজেলা সদরের কমলারাণীর দিঘির পূর্বদিক থেকে যানবাহন ও পুণ্যার্থীদের ভিড় শুরু হয়। সপ্তমী ও অষ্টমী পূজার দিনে প্রায় তিন কিলোমিটার পথ পুণ্যার্থীরা হেঁটে পাড়ি দিয়ে পূজা মণ্ডপ দর্শনে যায়। 

লালবর্ণের জাগ্রত দেবীদুর্গা দর্শনে প্রতিবছর লাখ লাখ ভক্তের আগমন ঘটে এখানে। পূজার সময় শতশত পাঁঠা বলি দেওয়া হয়।

পূজা উদযাপন কমিটির পরিচালক সঞ্জয় দাস জানান, মূলত এটি পারিবারিক পূজা। পূজা পরিচালনাকারীদের মধ্যে তিনি এখন ষষ্ঠ পুরুষ। তার পূর্বপুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস ধ্যানে বসে কুমারী পূজার মাধ্যমে লাল দুর্গার দর্শন পাওয়ার পর প্রতিবছর এখানে লাল দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি আরও জানান, প্রায় তিনশ’ বছর ধরে তাদের বাড়ির মণ্ডপে লাল দুর্গার পূজা হচ্ছে। এখানে পূজা শুরুর পর থেকে একবারও ছেদ পড়েনি। শুধুমাত্র একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মূর্তি নির্মাণ করে পূজা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সেবার ঘটে পূজা হয়েছিল। 

সঞ্জয় দাস লাল দুর্গা পূজার ইতিহাস জানান এভাবে: তাদের পূর্বপুরুষ সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরুপ-কামাক্ষ্যা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয় লোকজন তাকে একটি মেয়ে দেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেন। 

মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, ‘তুমি আমার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাও। আমি তোমাকে বর (আশীর্বাদ) দিবো।’ সর্বানন্দ দাস তখন তার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ হবে লাল। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে। ভক্তদের বিশ্বাস পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা। 

দেবী দর্শনার্থী অজয় দেবরায় বাংলানিউজকে জানান, অন্য প্রতিমা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। লাল বর্ণের দেবী মূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। যে কারণে এই প্রতিমার কাছে ভক্তদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা। 

দুর্গা পূজা মণ্ডপকে ঘিরে প্রায় আশেপাশের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এখন মেলা বসে। কয়েকশত দোকানে বেচাকেনা হয় খই, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা, জিলাপি, মিষ্টি, বাঁশি, বেলুন, ঝুমঝুমি কতকিছু।

এখানে আগত হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা তাদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান। কেউবা পশু বলি দেন। 

এখানে দুর্গা মণ্ডপ একটি, নাট মন্দির একটি, যজ্ঞ মন্দির একটি, যাত্রী নিবাস একটি, ভোগ মন্দির একটি, ফুল নৈবদ্য রাখার ঘর একটি, শিব মন্দির একটি এবং পাকা ঘাটসহ পুকুর একটি রয়েছে।

মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায় মুন্না জানান, প্রতিবছরের মতো পাঁচগাঁওয়ে পূজা উদযাপনের জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 


তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট

No comments:

Post a Comment