ভূমিকম্পে ভারতে ধ্বংস প্রাপ্ত ভবন
কাল ফেসবুকে উৎসব লেগে গিয়েছিল। এত শক্তিশালী ভূমিকম্প আগে বোধহয় কেউ অনুভব করে নি। বিভিন্ন স্থানে অনেকে আহত হয়েছে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে।
বাংলাদেশে আতঙ্কিত মানুষ
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের সিকিম ও নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায়। জায়গাটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নিকটবর্তী। ভূগর্ভের ২০ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎ পত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূতত্ত্ব বিভাগও (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ উল্লেখ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতীয় এলাকায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।
ইউএসজিএস-এর মতে, ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে ভারতের সিকিমের গ্যাংটক ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরে। ঢাকায় ভূমিকম্পের তীব্রতা চার মাত্রার ছিল বলে মনে করছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশসংলগ্ল এলাকায় সবচেয়ে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৫০ সালে ভারতের আসাম এলাকায় ৮ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে বান্দরবানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। গত বছরের আগস্টে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প ভারতের আসাম এলাকায় সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে চট্টগ্রামের একটি ভবন ধসে ৩০ জনের মতো মারা যায়।
শিলিগুড়িতে আতঙ্ক ভারত, নেপাল ও তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬-তে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো না পাওয়া যাওয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ভূমিধস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন প্রতিবেদনে আজ সোমবার এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সিকিমে ৩৯ জন, পশ্চিমবঙ্গে ছয়, বিহারে ,নেপালে এবং তিব্বতে সাতজন করে নিহত হয়েছে। নেপালে নিহত লোকজনের মধ্যে তিনজন কাঠমান্ডুতে ব্রিটিশ দূতাবাসের দেয়ালধসে মারা যায়।
বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত নয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্পজনিত এশিয়ান সুনামি সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ভূমিকম্প অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতন প্রায়ই সংঘটিত হয় না তবে একটি ভূমিকম্প একটি সভ্যতাকেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে । ১৮৯৭সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পের পর এদেশ তেমন কোন বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি বলে আজকের প্রজন্মের কাছে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত বিষয় নয়। তবে বর্তমান অবস্থায় ১৮৯৭ সালের মতন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সময় এসেছে ভূমিকম্প সম্পর্কে জাতীয় এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার।
সম্প্রতি বিলহাম এবং অন্যান্যরা (২০০১) গবেষণা করে দেখেছেন হিমালয় অঞ্চলে ন্যূনতম ৮.১ হতে ৮.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নিকট ভবিষ্যতে অবশ্যম্ভাবী। এমনটি হলে এ অঞ্চলের ৫ কোটি লোক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই ৫ কোটির বিরাট অংশই বসবাস করে আগ্নেয় প¬াবন ভূমিতে আর বাংলাদেশ এই প¬াবনভূমির অংশ বিশেষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ, জাপান কিংবা ইন্দোনেশিয়ার মত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থ্না না করলেও শুধুমাত্র ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাবের কারণে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ স্থান হিসাবে বাংলাদেশের ঢাকা ও ইরানের তেহরান নগরকে সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নগরী হিসাবে চিহ্নিত করেেেছ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই চিহ্নিতকরণের কারণ কি? দুর্বল অবকাঠামো ? অধিক জনসংখ্যা? দ্রারিদ্রতা? যার জবাব হল এগুলোর সবকিছূই এবং আমাদের কুটিল অর্থনীতির কারণে দুর্যোগ মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে অসামর্থতা ঢাকা নগরীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে ।
ভূমিকম্পের ফলে প্রধানত ইট ও কংক্রিটের ঘর- বাড়ি ভেঙ্গে মানুষ চাপা পড়ে। স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নগরীর অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ হয়েছে ও অপরিকল্পিতভাবে এবং দ্রুত। ফলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও ঢাকা শহরে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাতে পারে। তাই সচতন হবার এখনই সময়।
ভূমিকম্প বিষয়ে আলোচনার পূর্বে ভূমিকম্পের কারণ বিশ্লেষণ করা একান্ত প্রয়োজন। পৃথিবী ৭ টি প্রধান পে¬টসহ অসংখ্য ছোট ছোট পে¬টে বিভক্ত। এসকল পে¬ট খুবই সক্রিয়। এ পে¬টগূলোর সংযোগস্থলে সাধারণত ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। সংযোগস্থল আবার ২ রকম, কোথাও কোথাও পে¬টগুলো বিপরীত দিকে অগ্রসরমান, কোথাও কোথাও একই দিকে অগ্রসরময়। যে সকল স্থানে পে¬টগুলো একই দিকে অগ্রসরময়। সেসকল স্থানে বেশী এবং বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। একই দিকে অগ্রসরময় পে¬ট বাউন্ডারীকে ট্রেন্স সিসটেম বলে। বিপরীত দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বাউণ্ডারীকে রিজ সিসটেম বলে। এ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল আছে। এ সকল ফাটলকে ভূতাত্বিক ভাষায় ফল্ট বলে। ফল্ট বরাবর ভূস্তরের হঠাৎ বিচ্যুতির জন্য ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই ফল্ট বরাবর বিচ্যুতি সৃষ্টি প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি অন্যান্য কারণেও সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় বাঁধ দিয়ে পানির জলধার তৈরী করলে পানির অত্যধিক ভারে ভূস্তরের দুর্বল স্থান অথবা ফল্ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
এখন বাংলাদেশের অবস্থান এবং ভূমিকম্পের ইতিহাস বর্ণানা করা যেতে পারে - বাংলাদেশের উত্তর এবং পূর্ব বরাবর ভারত এবং ইউরেশিয়ার পে¬টের সংযোগস্থল এবং উত্তর -পূর্ব বরাবর এই দুইটি পে¬ট একই দিকে অগ্রসরমান। আগেই বলছি একই দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। এই পে¬ট স্তরের সংযোগস্থলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিধায় বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে অবস্থিত। প্রশ্ন উঠতে পারে এই পে¬ট বাউণ্ডারি তো বাংলাদেশের বাইরে। তাহলে বাংলাদেশ কেন ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর হিসাবে বলা যেতে পারে ১৯৮৮ সালের মেক্সিকো ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ৩৫০ - ৪০০ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পের ফলে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো সিটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে অথচ উৎপত্তিস্থলের কাছে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
বিশ্বে প্রায় সব ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দুটি সুপরিচিত অঞ্চল বা বলয়ে উদ্ভূত হতে দেখা যায়। যেমন: দি সারকাম-প্যাসিফিক বেল্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় ও ভূমধ্যসাগরীয় হিমালয় ভূকম্পনীয় বলয়।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হলেও এই কম্পনের প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে ধ্যানধারণা খুবই অপ্রতুল। এ দেশে ভূমিকম্প অনুধাবনের প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ভেতরে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে বিগত ২৫০ বছরের ভূকম্পনের ইতিহাস পাওয়া যায়। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫টিরও বেশি আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালের পর। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিগত ৩০ বছরে ভূমিকম্পের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ উচ্চ ভূকম্পনশীল অঞ্চলগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের হিমালয়ান আর্ক ও শিলং মালভূমি, পূর্বে বার্মিজ আর্ক ও আরাকান ইয়োমা ঊর্ধ্বভঙ্গধারা এবং উত্তর-পূর্বে জটিল নাগা ডিসাং হাফলং ঘাত অঞ্চল। ভূগাঠনিক দিক থেকে দুর্বল এসব অঞ্চল অববাহিকা এলাকার মধ্যে শিলা চলাচলের প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে বলে ধারণা করা হয়
১৮৯৭ এর ভুমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত কাথলিক কবরস্থান তাই বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাহিরে যে বাউন্ডারি পে¬ট তার ফলে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে পারে। গত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে ভূমিকস্পের প্রভাবের ইতিহাস বিশে¬ষণ করলে আমরা এর প্রমাণ দেখতে পাব। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৭ টি বড় মাপের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।
তারিখ-------------ভূমিকম্প উৎপত্তি স্থল-------মেগনিচুড(রিখটার স্কেল)
১০ জানুয়ারী ১৮৬৯-----শিলচড়---------------৭.৫
১৪ জুলাই ১৮৮৫--------মানিকগন্জ-----------৭.০
১২ জুন ১৮৯৭----------শিলং, মেঘালয়--------৮.৭
৮ জুলাই ১৯১৮---------শ্রীমঙ্গল----------------৭.৩
২ জুলাই ১৯৩০---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ জানুয়ারী ১৯৩৪-----বিহার----------------- ৮.৩
৩ জুলাই ১৯৩৪---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ আগস্ট ১৯৫০-------উত্তর আসাম-----------৮.৫
তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতে জিওলজিক্যাল সারভে অভ ইন্ডিয়ার মহাপরিচালকথমাস ওল্ডহ্যাম (১৮১৬-১৮৭৮) প্রথমবারের মতো ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের ক্যাট্যালগ তৈরী করেন। তার ক্যাট্যালগে ৮৯৩ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের উল্লেখ ছিল। পরবর্তীকালে তার পুত্র রিচার্ড ওল্ডহ্যাম (১৮৫৮-১৯৩৬) ক্যাটালগটি আরো সমৃদ্ধ করেন। সেই ক্যাটালগে ১৮৬৯ সালের এবং ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প দুইটির বর্ণনা ছিল।
কাচার ১০ জানুয়ারী ১৮৬৯: এটি Cachar Earthquake নামে পরিচিত। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল শিলচড়, জৈন্তা পাহাড়ের উত্তর অংশে। জায়গাটি সিলেটের খুব কাছে। থমাস ওল্ডহ্যাম অঞ্চলটি সিলেটের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫। ভূমিকম্পটি ৬,৬৫,৬০০ ব:কি: এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল। সিলেটের পূর্বাঞ্চল, শিলচড়, নওগাং, ইম্পাল এলাকার অনেক কংক্রীটের কাঠামো সম্পূর্ণ ধব্বংস হয়েছিল। প্রাণহানীর পরিমাণ ছিল অল্প, সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।
মানিকগন্জ ১৪ জুলাই ১৮৮৫: এটি Bengal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.০। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগন্জ। অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর সংখ্যা জানা যায়নি। যমুনা নদীর উপর এই ভূমিকম্প ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
১৮৯৭ এর ধ্বংসাবসেশ শিলং ১২ জুন ১৮৯৭: এটি Great Indian Earthquake নামে পরিচত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৭। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শিলং, মেঘালয়। সরকারী হিসাবমতে এই ভূমিকম্পে প্রণহানীর সংখ্যা ১৫৪৩। এর মধ্যে সিলেটে ৫৪৫ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ৩০,০০০ বর্গ মাইলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত পাথরের এবং কংক্রীটের দালান ধব্বংস হয়েছিল। এই ভূমিকম্পে সিলেটের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ময়মনসিং এবং উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশে এই ভূমিকম্পের ফলে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল। অসংখ্য যায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। সুরমা এবং ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। ব্রহ্মপূত্রের গতিপথ চিরস্থায়ীভাবে বদলে যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিলো। এর পরের জানা ভূমিকম্পটি হয় ১৯৫০ সালে আসাম চীন সীমান্তের মেডং এলাকায়। এর মাত্রা ছিল রিকটার স্কেলে আনুমানিক ৮.৬। এর ফলে ১৫২৬ জন নিহত হয়েছিলো এবং প্রাকৃতিক ফলাফলে পাহাড়ের পলি ভূমিধ্বস আকারে নেমে এসে ব্রহ্মপূত্র হয়ে যমুনার মাধ্যমে বাংলাদেশে এসে যমূনাকে একটি গতিশীল চরোৎপাদী নদীতে (Dynamic Braided River ) রূপান্তরিত করেছিলো। তারপর থেকেই যমুনার আগ্রাসী ভাঙ্গনের শুরু।
১৮৯৭ এর আসাম ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া রেলপথ
শ্রীমঙ্গল ৮ জুলাই ১৯১৮: এটি Srimongal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শ্রীমঙ্গলের বালিছেড়া। এই ভূমিকম্পে শ্রীমঙ্গল এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর খবর জানা যায়নি।
এছাড়া ১৫৪৮ সাল থেকে এদেশে ১৯ টি বড় মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে। ১৫৪৮ সালে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভুমিকম্প হয়। রেকর্ড বলে ওই সময় পানি ও কাদা প্রচণ্ড ভাবে উপরে উঠে আসে।
১৬৪২ সালে সিলেটে ভুমিকম্পে বাড়িঘর ধসে গেলেও প্রানহানি ঘটে নি।
১৬৬৩ সালে আসামে ৩০ মিনিটের ভুমিকম্পে সিলেট তছনছ হয়ে যায়।
১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল নিদারুণ ভুমিকম্পে শুধু ঢাকাতেই ৫০০ লোক মারা যান। সারা দেশে ২০০ লোক ভুমিধবসে মারা যান। এছাড়া সীতাকুণ্ডে ২ টি আগ্নেয়গিরি উন্মুক্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৭৭৫ এর ১০ এপ্রিল ও ১৮১১ এর ১১ মে দুটি কম্পন আঘাত হানে।
১৮৯৭ এর ভূকম্পনের রিপোর্ট
ভূমিকম্পের সময় করনীয়
ভুমিকম্পের সময় মোটেই আতঙ্কিত হবেন না। এই দূর্যোগে রক্ষা পেতে সাধারণভাবে কিছু বিধি অনুসরন করুন।
বিধি ১: নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেণ্ড হতে সর্বোচ্চ মিনিটখানেক। এই সময়ে ঘরে অবস্থান করলে টেবিল বা ডেস্কের নিচে সপরিবারে অবস্থান নিন। আপনার মাথায় কোনকিছুর আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।
বিধি ২: গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা দ্রুত বন্ধ করুন!
ভূমিকম্পের সময় আগুন লেগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে য়ত দ্রুত সম্ভব রান্না ঘরের গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন যত ছোট ভূমিকম্পই হোক না কেন চুলা বন্ধ করতে হবে।
বিধি ৩: তাড়াহুড়োকরে বাইরে বেড় হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড় হতে গেলে ভীড়ে চাপা পড়ে বা উপর হতে মাথায় কিছু পড়ে আহত হতে পারেন। এই জন্য তাড়াহুড়ো না করে ধীর স্থিরভাবে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাইরে বেড় হবার চেষ্টা করুন।
বিধি ৪: দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন!
দালানে বসবাসকারীদের প্রধান সমস্যা হয় ভূমিকম্পের সময় দরজা আটকে বন্দী হয়ে যাওয়া। এইজন্য বাইরে যাবার দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন।
বিধি ৫: বাইরে বেড় হবার সময় মাথা রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন হতে বাইরে বেড় হবার সময় অনেকেই উপর হতে কোন কিছু পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। এটা এড়াতে বাইরে বেড় হবার সময় মাথার উপর শক্ত বোর্ড বা ট্রে জাতীয় কিছু ধরে রাখুন। এতে করে উপর থেকে কিছু পড়লেও আপনার মাথায় আঘাত লাগবে না।
বিধি ৬: সিনেমা হল বা ডিপার্টমেণ্টাল স্টোরের মত পাবলিক প্লেসে করনীয়!
সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, ডিপার্টমেণ্টাল স্টোর, রেল স্টেশন বা এয়ারপোর্টের মত পাবলিক প্লেসে থাকলে সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরামর্শ অনুসরন করুন।
বিধি ৭: গাড়ি বামদিকে পার্ক করুন!
ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বামপাশে পার্ক করুন। কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্প চলাকালিন সময় গাড়ি চালাবেন না।
বিধি ৮: পাহাড়ী রাস্তায় ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথর খেয়াল করুন!
ভুমিকম্প চলাকালিন সময়ে আপনার গাড়িটি পাহাড়ী এলাকায় থাকলে ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে গাড়িটি পার্ক করুন।
বিধি ৯: উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে হাটুন!
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকা হতে নিরাপদ এলাকায় সরে যাবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করার চেয়ে পায়ে হাটা অনেক নিরাপদ।
বিধি ১০: গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় গুজব বা ভুল তথ্যের কারনে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে বিপদ ডেকে আনেন। এজন্য সঠিক তথ্য পেতে রেডিও/টিভির বুলেটিন শুনুন।
তথ্যসূত্রঃ
১। http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=16&t=4464
২। দৈনিক প্রথম আলো
৩। দৈনিক আমাদের সময়
৪। বাংলাপিডিয়া
৫। www.probashaprotidin.com
৬। সিকিমে ভূমিকম্প কি আরো বড় কিছুর পূর্বাভাস? আমাদের আত্মরক্ষায় করনীয়ঃ এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান,
৭। http://www.seikatubunka.metro.tokyo.jp/index3files/survivalmanual.pdf