Make our mind vaster than space

Make our mind vaster than space
Milky Way Galaxy

Sunday, September 25, 2011

উগান্ডা-তানজানিয়া যুদ্ধ


জুলিয়াস নায়ারে এবং ইদি আমিন



উগান্ডাকে বলা হয়ে থাকে পার্ল অব আফ্রিকা । উগান্ডার পূর্বে আছে কেনিয়া, উত্তরে দক্ষিণ সুদান, পচ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো,দক্ষিণ পূর্বে রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণে তানজানিয়া।
নীল নদের উৎসের দেশ হিসেবেও এর একটি পরিচয় আছে। তবে এই দেশটির পরিচিতি পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে যে ব্যক্তি অপরিসীম ভূমিকা রাখেন তিনি জলপাই রঙের শাসক ইদি আমিন। তার শাসনামলে প্রায় ৩ লাখ লোক প্রাণ হারায়। কারো কারো মতে এই সংখ্যা ৫ লাখের মত। তার স্বৈর-শাসনের ইতিহাস আজো অত্র অঞ্চলের মানুষের মনে দগদগে ক্ষত হয়ে বিরাজমান।
 এই কুখ্যাত নেতার ৮ বছরের শাসনামলের পতন ঘটে এক যুদ্ধের মাধ্যমে। সেই যুদ্ধটি হয় পার্শ্ববর্তী তানজানিয়ার সাথে। সেই যুদ্ধে উগান্ডা পরাজিত হয় শোচনীয়ভাবে। এবং ইদি আমিনের পতন ঘটে। এই যুদ্ধকে উগান্ডার স্বাধীনতা যুদ্ধও বলা হয়।
১৯৭৮-৭৯ সালের এই যুদ্ধে ইদি আমিনকে সহায়তা করেছিলেন লিবিয়ার একনায়ক মুয়ারমার আল গাদ্দাফি এবং পিএলও।

পূর্ব কথাঃ
১৯৭১ এ সামরিক অভুথানের মধ্য দিয়ে ইদি আমিন উগান্ডার ক্ষমতা দখল করেন। তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জুলিয়াস নায়ারে উগান্ডার ক্ষমতাচুত প্রেসিডেন্ট মিলতন অবতেকে আশ্রয় দেন ২০ হাজার উদ্বাস্তুসহ। এক বছর পর তারা উগান্ডাকে আক্রমণের বৃথা চেষ্টা করেন। আমিন নায়ারেকে দোষারোপ করেন তার শত্রুকে সমর্থনের জন্য। দুই দেশের ভিতর সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।

১৯৭৮ এর অক্টোবরের শুরুর দিকে কাম্পালাতে বিদ্রোহীরা আমিনের বাসভবন আক্রমণ করে। আমিন হেলিকপ্টারে করে সপরিবারে পালিয়ে রক্ষা পান। এদিকে আমিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা আদ্রিসি সন্দেহজনক গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হন। আদ্রিসির অনুগত সৈন্যরা বিদ্রোহ করল। আমিনের সৈন্যরা বিদ্রোহ দমন করল। মুস্তাফা আদ্রিসির কিছু সৈন্য তানজানিয়াতে পালিয়ে গেল। বিদ্রোহ তানজানিয়াতে ছড়িয়ে পড়লো। আদ্রিসির সৈন্যরা মিলতন অবতের সৈন্যদের সাথে মিলিত হয়ে আমিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল।

আমিন তানজানিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। উগান্ডার সরকারী বাহিনী তানজানিয়ার কাগারা অঞ্চলের বিরোধপূর্ণ জায়গা দখল করে নিল।উগান্ডার এম৪এ১ ট্যাঙ্ক, ৭৬ মিমি কামান সহ। তারা তানযানিয়ার টি ৫৫ ট্যাঙ্কের কাছে ছিল শিশু

যুদ্ধঃ
নায়ারে তানযানিয়ার পিপলস ডিফেন্স ফোরসকে উগান্ডার আর্মির বিরুদ্ধে মোতায়েন করেন। কয়েক সপ্তাহের ভিতর ৪০০০০ নিয়মিত সৈনিকের সাথে ৬০০০০ পুলিশ,মিলিসিয়া,কারারক্ষী যোগ দেন। উগান্ডার আমিন বিরোধিরা উগান্ডান ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি গঠন করে নায়ারের সাথে যোগ দেন। রাসসিয়ান রাশিয়ান বিএম কাতুস্কা দিয়ে তানযানিয়ানরা উগান্ডার সেনাদের উপর গোলা বর্ষণ করে। উগান্ডা সেনাবাহিনী পিছিয়ে যায়। লিবিয়ার মুয়ারমার আল গাদ্দাফি ২৫০০ সৈন্য,  টি ৫৪, টি ৫৫ ট্যাংক, মিগ ২১, টু ২২ বিমান ও গোলা বারুদ দিয়ে সাহায্য করেন। কিন্তু লিবিয়ানরা খুব দ্রুত টের পায় তারাই সম্মুখ যুদ্ধ করছে এবং উগান্ডান সেনারা পরিবহন ট্রাক দিয়ে তানজানিয়া থেকে লুটের মাল উগান্ডাতে নিয়ে যাচ্ছে।

তানজানিয়া ও উগান্ডার বিদ্রোহীরা কাম্পালা অভিমুখে যাত্রা করে কিন্তু লুকাইয়া অঞ্চলে জলাভূমির কারণে থেমে যায়।

তানজানিয়ার ২০১ তম ব্রিগেড জলাভূমি পাড়ির সিদ্ধান্ত নেয়। ২০৮ তম জলাভূমির পচ্চিম দিক দিয়ে বিকল্প পথে অগ্রসর হয়।

কিন্তু ১৯৭৯ এর ১০ মার্চ লিবিয়ানদের একটি ব্রিগেডের সাথে সংঘর্ষে ২০১ তম ব্রিগেড পিছু হটে। কিন্তু ২০১ ব্রিগেড সুসংঘটিত হয়। তারা দক্ষিণ ও ২০৮ ব্রিগেড উত্তর দিক দিয়ে ১১-১২ তারিখের রাতে লিবিয়ানদের উপর হামলা করে। লিবিয়ানদের প্রতিরোধ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।

ওই দিন ২০০ লিবিয়ান ও ২০০ উগান্ডার সরকারী সৈন্য নিহত হয়।

১০ এপ্রিল ১৯৭৯। তানজানিয়া ও উগান্ডার বিদ্রোহীদের হাতে এন্তেব বিমানবন্দর এবং রাজধানী কাম্পালার পতন ঘটে।
 এন্তেব বিমানবন্দরে ধ্বংসপ্রাপ্ত উগান্ডান মিগ ২১,১০ এপ্রিল ১৯৭৯ 
সেখানে লিবিয়ান ও উগান্ডার সরকারী সৈন্যদের প্রবল প্রতিরোধ সত্ত্বেও তানযানিয়ান্দের বিজয় ঘটে। আমিন প্রথমে লিবিয়া পরে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। লিবিয়ান আর্মি পিছু হটে।

উগান্ডার নির্বাচন পর্যন্ত তানজানিয়ার সেখানে ছিল।

শেষ হয় ইদি আমিনের কালো শাসন।

তথ্যসূত্রঃ
১। ভ্রমণঃ পার্ল অব আফ্রিকা ( পর্ব ১)- বাণীব্রত রায়
২। উইকিপিডিয়া ২৫/০৯/২০১১ 

Friday, September 23, 2011

কিউবার মিসাইল সংকট ১৯৬২




"Nuclear catastrophe was hanging by a thread ... and we weren't counting days or hours, but minutes."
-Soviet General and Army Chief of Operations, Anatoly Gribkov 


কিউবার মিসাইল সংকট ছিল এমন এক অবস্থা যখন বিশ্ব পারমাণবিক যুদ্ধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল। সোভিয়েতরা কিউবাকে পারমাণবিক যুদ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইল। আমেরিকান আর্মি তাদের দেশ হতে মাত্র ৯০ মাইল দূরে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন দেখে নিরাপত্তার সরবচ্চ সতর্ক অবস্থা ঘোষণা করল। বিশ্ব থমকে গেল। অবশেষে জন এফ কেনেডি ও নিকিতা ক্রুচেবের সাহসী পদক্ষেপে বিশ্ব মুক্তি পেল রক্তগঙ্গা থেকে।ঐসময়ে একটি কার্টুন 

সোভিয়েতরা ইউরোপ এর উপর নজর রাখতে পারত। কিন্তু তারা আমেরিকার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইল। তখন স্নায়ু যুদ্ধের সময়। আমেরিকান ভূখণ্ড থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে তারা কিউবার দিকে নজর দিল। সেখানে সমাজতান্ত্রিক সরকার মার্কিনবিরোধী। এদিকে কিউবার নেতা কাস্ত্রো ১৯৬১ এর বে পিগ আগ্রাসনের পর ভিত। মার্কিন আক্রমণ থেকে দেশকে বাচাতে রাশিয়ানদের সাহায্য চাইলেন। ২ এ ২ এ ৪ হয়ে গেল। সোভিয়েতরা গোপনে কিউবাতে মিসাইল ঘাঁটি স্থাপন করতে লাগল। তখনই সংকট শুরু হল।
মস্কোর রেড স্কয়ারে Soviet R-12 intermediate-range nuclear ballistic missile (NATO designation SS-4) । এই ধরনের মিসাইলই কিউবাতে মোতায়েন করা হয়েছিল।
এক নজরে সংকটের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করা হলঃ

১ জানুয়ারী ১৯৫৯ঃ বাতিস্তার সরকারকে উৎখাত করে ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতা দখল করেন।

১৯ ডিসেম্বর ১৯৬০ঃ কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সাথে প্রকাশ্য বন্ধুত্ব স্থাপন করে ও তাদের নীতি গ্রহণ করেন।

৩ জানুয়ারি ১৯৬১ঃ  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিউবার সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে।

১২ এপ্রিল ১৯৬১ঃ প্রেসিডেন্ট জে এফ কেনেডি দাবি করেন আমেরিকা কিউবাতে কোনরকম সামরিক আগ্রাসন করবে না।

১৭ এপ্রিল ১৯৬১ঃ কিউবান উদ্বাস্তুদের দিয়ে আমেরিকা কাস্ত্রো সরকারকে উৎখাতের চেস্টা করে। প্রতিবিপ্লব ব্যর্থ হয়।

৩-৪ জুন ১৯৬১ঃ ক্রুশেভ ও কেনেডি ভিয়েনা তে বৈঠক করেন।

২৭ জুন ১৯৬২ঃ কাস্ত্রো দাবি করেন কিউবা এমন প্রতিরোধ ব্যাবস্থা নিচ্ছে যাতে আমেরিকার কন হামলার জবাবে বিশ্ব যুদ্ধের মত পাল্টা জবাব দেয়া যায়। এতে সোভিয়েত ইউনিয়ন সাহায্য করছে।

১০ আগস্ট ১৯৬২ঃ সিআইএ ডিরেক্টর জন মাক্কন কেনেডিকে জানান তার সন্দেহ সোভিয়েতরা কিউবাতে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করছে।

৩১ আগস্ট ১৯৬২ঃ সিনেটর কেনেথ কেতিন বলেন সোভিয়েতদের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ব্যাপারে প্রমাণ আছে। তিনি প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে ওই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬২ঃ জাতিসংঘে সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দ্রেই গম্যক বলেন কিউবার উপর কোন হামলা সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উপর হামলার সমান।

৯ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডি একটি উ২ বিমানকে কিউবার উপর গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দেন। খারাপ আবহাওয়ার কারনে তা ৫ দিন দেরি হয়।

১০ অক্টোবর ১৯৬২ঃ সিনেটর কেতিন দাবি করেন সোভিয়েতরা কিউবাতে অন্তত ৬ টি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করছে।

১৪ অক্টোবর ১৯৬২ঃ উ২ বিমান পচ্ছিম কিউবাতে ঘাঁটিগুলো আবিষ্কার করে। তার ফটো তুলে।উ২ বিমান থেকে তোলা কিউবার মিসাইল ঘাঁটির ফটো

১৫ অক্টোবর ১৯৬২ঃ  National Photographic Intelligence Center একটি দল ছবি থেকে ওগুলোকে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বলে চিহ্নিত করেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকজর্জ বারনি সিদ্ধান্ত নেন পরের দিন প্রেসিডেন্টকে ব্যপারটা জানানো হবে।  মার্কিন P-2H Neptune বিমান সোভিয়েত জাহাজের উপর উড়ছে।

সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স  রবার্ট মাকনামারাকে ফটোগ্রাফিক প্রমাণ দেখানো হয়।

১৬ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডিকে জানানো হল ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি। কেনেডি তার উপদেষ্টাদের সাথে সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক সমাধানের ব্যপারটি আলোচনা করলেন।

১৭ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডি কান্নেক্তিকাতে ডেমোক্রাতিক পার্টির সদস্য আবে রিদ্ইক্কফের জন্য ক্যাম্পেইন করতে যান। রবার্ট কেনেডি ও থিওদর সরেন্সেন বিমানবন্দরে তার সাথে দেখা করে জানান ওই দিন তিনি মিটিঙে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ মিস করেছেন। ওই দিন বিমানবাহিনির প্রধান এবং Joint Chiefs of Staff বিমান হামলা চালাতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ওইদিন রাতে বিমানবাহিনির উ২ বিমান আবিষ্কার করে শুধু মধ্যম পাল্লা নয় উচ্চ মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও কিউবাতে সোভিয়েতরা মোতায়েন করেছে।

১৮ অক্টোবর ১৯৬২ঃ সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দ্রেই গম্যক প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে আশ্বস্ত করেন কিউবাতে সোভিয়েতদের সাহায্য কেবল কিউবার প্রতিরক্ষা মূলক ব্যবস্থা।সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্দ্রেই গম্যক প্রেসিডেন্ট কেনেডির সাথে বৈঠক ১৮ অক্টোবর ১৯৬২

১৯ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডি নির্ধারিত ক্যাম্পেইনের জন্য ক্লিভল্যান্ড এবং ওয়েস্ট কোস্টে যান।

২০ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডির তত্থসচিব জানান কেনেডি "upper respiratory infection." এর জন্য বাকি ক্যাম্পেইন বাতিল করেছেন।
কেনেডি আবার উপদ্বেষ্টাদের সাথে বৈঠক করলেন।

২১ অক্টোবর ১৯৬২ঃ জেনারেল ম্যাক্সওয়েল টাইলর কেনেডিকে জানান বিমান হামলা দিয়ে কিউবাতে সব সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র হয়ত নাও ধ্বংস হতে পারে।
কেনেডি কিউবার উপর অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। রাতে ঊ২ বিমান আবিষ্কার করে কিউবার উত্তর উপকূলের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটিতে মিগ ও বোম্বার মোতায়েন করা হচ্ছে।

২২ অক্টোবর ১৯৬২ঃ হোয়াইট হাউজে কংগ্রেস সদস্যরা জড়ো হন। তাদের ফটোগ্রাফিক প্রমাণ দেখানো হল। সদস্যরা কেনেডিকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ঐদিন কেনেডি জাতির উদ্দেশে ভাষণে কিউবাতে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রের কথা জানালেন। তিনি বললেনঃ "
It shall be the policy of this nation to regard any nuclear missile launched from Cuba against any nation in the Western Hemisphere as an attack by the Soviet Union on the United States, requiring a full retaliatory response upon the Soviet Union.

To halt this offensive buildup, a strict quarantine on all offensive military equipment under shipment to Cuba is being initiated. All ships of any kind bound for Cuba, from whatever nation or port, will, if found to contain cargoes of offensive weapons, be turned back. This quarantine will be extended, if needed, to other types of cargo and carriers. We are not at this time, however, denying the necessities of life as the Soviets attempted to do in their Berlin blockade of 1948
 "  মার্কিন সেনাবাহিনী DEFCON 3 (প্রতিরক্ষার একটি লেবেল) ঘোষণা করলেন। গুয়ান্তনাম বে তে প্রচুর সৈন্য জড়ো হল। 
২৩ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডি ৬ টি ক্রুসেডার বিমানকে নিচু লেবেলে গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দিলেন।
Organization of American States (OAS) কিউবার বিরুদ্ধে অবরোধ জারি করল।
দিনের শেষে আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজ গুলো কিউবার জলসীমার ৮০০ মাইলের ভিতর অবস্থান নিল। সন্ধ্যায় কেনেডি তার ভাই রবার্টকে সোভিয়েত দূতাবাসে পাঠালেন রাষ্ট্রদূত দব্রাইনিনের সাথে কথা বলতে। ক্রুসচেভ কেনেডিকে চিঠি দেন যে এভাবে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। কেনেডি ক্রুসচেবকে সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।  ২৩ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কেনেডি ৬ টি ক্রুসেডার বিমানকে নিচু লেবেলে গোয়েন্দাগিরির নির্দেশ দিলেন।

২৪ অক্টোবর ১৯৬২ঃ কিউবামুখি সোভিয়েত জাহাজগুলো হয় গতিপথ পরিবর্তন করলো নয়তো আস্তে আস্তে এগুলো।
আমেরিকান আর্মি DEFCON 2 ঘোষণা করল আমেরিকার ইতিহাসে সরবচ্চ।  ক্রুসচেভ কেনেডিকে চিঠি দেন

২৫ অক্টোবর ১৯৬২ঃ সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ক্রুসচেবকে কেনেডি জানান অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেই দায় নিতে হবে। ঐদিন কেনেডির উপদেস্থারা বৈঠক করলেন। জাতিসংঘে সোভিয়েত ঘাঁটির ফটো দেখানো হচ্ছে। ২৫ অক্টোবর ১৯৬২তারা তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে আনতে চাইলেন বিনিময়ে কিউবা থেকে সোভিয়েতরা ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে আনবে।

২৬ অক্টোবর ১৯৬২ঃ সোভিয়েত জাহাজ মারকুলা অবরোধ ভেঙ্গে কিউবান জলসীমাতে প্রবেশ করল। কেনেডি জানান অবরোধ আরোপ কিউবানদের থামাতে পারবে না। সিআইএ জানায় অবরোধ দিয়েও কিউবাতে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করার কাজ একটুও থামে নাই। আরেকটি উ২ বিমান আবিষ্কার করল সোভিয়েতরা ক্যামোফ্লাজ দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র লুকাতে চাইছে।
ঐদিন আলেকজান্ডার ফমিন, ওয়াশিংটনে কেজিবির স্টেশন প্রধান ABC News কে জানান সোভিয়েতরা কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করবে যদি কেনেডি বিশ্বের উদ্দেশে বলেন তিনি কিউবা আক্রমন করবে না। ক্রুশেভ কেনেডির কাছে পাঠানো চিঠিতে ঠিক একই দাবি করলেন।

২৭ অক্টোবর ১৯৬২ঃ ক্রুশেভ কেনেডিকে চিঠি দেন। বলেন তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে আনতে বিনিময়ে কিউবা থেকে সোভিয়েতরা ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে আনবে।  Ibrahim-2 Jupiter Missile in Turkey.
একটি আমেরিকান উ২ বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে। এক মার্কিন মেজর রুদলফ এন্দারসন মারা যান।ভূপাতিত মার্কিন বিমানের ইঞ্জিন কিউবাতেআলাস্কার কাছে সোভিয়েত আকাশ সীমায় আমেরিকান উ২ বিমান ঢুকে পড়লে সোভিয়েত জঙ্গি বিমান তাকে ধাওয়া করে। রবার্ট ও দব্রাইনিন বৈঠক করেন। কেনেডি ক্রুশেভকে জানান যদি সোভিয়েতরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে তাহলে আমেরিকা কিউবা আক্রমণ করবে না।


২৮ অক্টোবর ১৯৬২ঃ ক্রুসচেভ মস্কো বেতারকে জানান তিনি কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহারে একমত।
মার্কিন SS-1 Seabat helicopter সোভিয়েত সাবমেরিনকে জলে ভেসে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে ২৮-২৯ অক্টোবর ১৯৬২
বিনিময়ে মার্কিনীরা জানালো তারা কিউবা আক্রমণ করবে না। শেষ হল কিউবার মিসাইল সংকট।


তথ্যসূত্রঃ
১। An Overview of the Crisis
২। Cuban Missile Crisis: Timeline

Wednesday, September 21, 2011

ঢাকের তালে জীবন চলে..আজি বাজা কাসর..জমা আসর



ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ঢাক কাঁধে ঢুলিঢোল একটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র। মধ্যযুগের বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যেও ঢোলের উল্লেখ পাওয়া যায়। পয়লা বৈশাখের লাঠিখেলা, হোলি খেলা, নৌকাবাইচ, কুস্তি, কবিগানের আসর, জারিগান, সারিগান, টপ্পাগান, আলকাপ গান, গম্ভীরা, ছোকরা নাচ, গাজনের গান, বাউলগান, মহররমের শোভাযাত্রা, যাত্রাগান, বিয়ের বরযাত্রা ইত্যাদিতে ঢোল বাজে। হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা ঢোল ছাড়া চলেই না। বিশেষ  করে দুর্গাপূজা ও কালীপূজায় ঢোল বাজানো হয়। কয়েক বছর আগেও সরকারি কোনো আদেশ বা পরোয়ানা ঢোল বা ঢেড়া পিটিয়ে বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঘোষণা করা হতো। ঢোলের আওয়াজ বহু দূর থেকে শ্রুত হয়।
ঢোল আর ঢাক অভিন্ন নয়। ঢোল ঢাকের চেয়ে ছোট। কিন্তু উভয় বাদ্যযন্ত্রেরই দুই প্রান্ত চামড়া দিয়ে ঢাকা থাকে। ঢাক বাজানো হয় দু’টি কাঠি দিয়ে একই প্রান্তে। বাংলা ঢোল নামে আরেকটি বাদ্যযন্ত্র আছে। বাংলা ঢোলের আকার সাধারণ ঢোলের চেয়ে বড়। বাংলা ঢোলের আওয়াজ সাধারণ ঢোলের চেয়ে গম্ভীর। এছাড়াঢোলের চেয়ে ছোট আরেকটি বাদ্যযন্ত্র আছে, যার নাম ঢোলক। ঢোলক দেখতে একটি ছোট পিপার মতো। ঢোলকের দু’দিকের ব্যাস সমান, ঢেকে রাখা চামড়া তুলনামূলকভাবে পাতলা। ঢোলক বাজাতে কোনো কাঠি লাগে না, হাত দিয়েই বাজানো হয়। ঢোলক বেশি ব্যবহৃত হয় নাটক ও যাত্রাপালায়। গজল ও কাওয়ালী গানে ঢোলক এক অপরিহার্য বাদ্যযন্ত্র। ঢোল যে বাজায় তাকে বলে ঢুলি বা ঢোলি। ঢুলিরা সাধারণত ঢোলের দু’দিকে মোটা রশি বা গামছা বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে ঢোল বাজান। ঢোল বাজাতে ডান হাতে একটি কাঠি ব্যবহার করা হয়। বাম হাতের তালু দিয়ে অন্যপ্রান্ত বাজানো হয়। ঢুলিরা ঢোলের ডান দিক কাঠির বাড়িতে এবং একই সঙ্গে হাতের চাঁটিতে বাম দিকে ঢোল বাজিয়ে থাকে। বাংলাদেশের বিনয় বাঁশি ভারত উপমহাদেশের একজন সেরা ঢোলবাদক। একটি খোদাই করা কাঠের উভয় দিক চামড়া দিয়ে ঢেকে এই ঢোল তৈরি করা হয়। ঢোল পিপার মতো একটা কাঠের খোলবিশেষ, যার দুই মুখ খোলা, ভেতরটা ফাঁপা। দু’দিকে চামড়া দিয়ে আচ্ছাদন দেয়া। একমুখে থাকে গরু বা মহিষের মোটা চামড়া, অন্যপ্রান্তে থাকে ছাগলের পাতলা চামড়া। এতে মোটা ও চিকন শব্দে তালে তালে ঢোল বাজে। ঢোলের খোলটির পিঠে দড়ির টানা থাকে। এই টানাতে পিতলের কড়া লাগানো থাকে। কড়া সামনে বা পেছনে টেনে ঢোলের সুর বাধা হয়। ঢোলের খোলটা মাঝখানে একটু মোটা, দুই প্রান্ত একটু সরু।



বরিশালে দুর্গা পুজায় ঢাক তৈরির শ্রমিকেরা ব্যস্ত: 

ঢাকের তালে জীবন চলে..আজি বাজা কাসর..জমা আসর, আজবেরে মা আসবেরে....বলো দূর্গা মায় কি...জয়....." শারদীয় দুর্গা পুজোর উৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। পুজোর সময় সন্ধ্যা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে দুর্গা মন্দিরের আশপাশসহ পাশর্্ববর্তী এলাকা। সন্ধ্যা শেষে মধ্যরাতে ঢাকের শব্দ শুনলেই বোঝা যায় মন্দিরের সম্মুখে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরম্ন হয়ে গেছে। তাই ঢাকের শব্দ শুনেই ধর্মবর্ণ নিবিশেষে অনুষ্ঠান প্রেমীরা দলবেঁধে ছুটে চলেন মন্দির আঙ্গিনায়। এছাড়া হিন্দু সমপ্রদায়ের বারো মাসের প্রায় প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিয়ে বাড়িতে ঢাক-ঢোল আর বাঁশির শব্দ এবং ঢুলীদের কোমর ঢোলানো নাচ-ই হচ্ছে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। 
প্রাচীনকাল থেকেই এ ঢাক বাদ্যের প্রথা চলে আসছে। এককথায় ঢাকের বাদ্য (শব্দ) ছাড়া দুর্গা পুজোর অনুষ্ঠানসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোন অনুষ্ঠানই জমে না। এছাড়াও অতীতের জমিদারদের পাইক পেয়াদারা ঢাক পিটিয়ে (বাজিয়ে) প্রজাদের মধ্যে জমিদারদের হুকুম জারি কিংবা নিমন্ত্রন করতেন। 
যুগ যুগ ধরে ঢাক বাদ্য তৈরি ও ঢাক বাজিয়ে অনেক মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমান আধুনিকতার যুগও প্রাচীনকালের ঢাকের প্রথাকে আজো বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি। বিশেষ করে দুর্গা পুজো আসলেই ঢাকের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই ঢাক তৈরির কারিগর ও শ্রমিকেরা এখন মহাব্যসত্ম সময় কাটাচ্ছেন। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজো উপলক্ষে ঢাক বাজানো বাদ্যকার ও বিভিন্ন মিউজিক পার্টি থেকে অর্ডার নেয়া ঢাক সঠিক সময়ে সরবরাহ করার জন্য ঢাক তৈরির কারিগর ও শ্রমিকদের এখন দিনরাত এককার হয়ে গেছে। 
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের ঢাক তৈরির কারিগর শ্যামল দাস (৫০)। বংশ পরম্পরায় দীর্ঘ ৩০ বছর পর্যনত্ম তিনি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তার জন্মস্থান মানিকগঞ্জে। শ্যামল দাস জানান, তার পূর্ব পুরম্নষ ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরির কাজ করেছেন। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থেকে কাজ শিখেছেন। তার শ্বশুর বরিশাল বিভাগের একমাত্র হিন্দু অধু্যষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করেছেন। সে হিসেবে তিনি (শ্যামল) গত ২০ বছর ধরে আগৈলঝাড়ায় স্থায়ী দোকান দিয়ে এ কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, একটি মাঝারি ঢাক তৈরি করতে তার ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সেটি বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। হিন্দু অধু্যষিত আগৈলঝাড়া বারো মাসই তিনি এ কাজ করে যাচ্ছেন। দুর্গা পুজো উপলক্ষে ইতোমধ্যে তার কাছে নতুন ঢাক তৈরি ও মেরামতের বেশ অর্ডার এসেছে। পাঁচ সদস্যের সংসারে ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত করে শ্যামল দাস তার পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই বসবাস করছেন। 

মানিকগঞ্জের ঢাক-ঢোল পাড়া: মানিকগঞ্জের ঢাক-ঢোল পাড়া

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মুনিদাশ পাড়াকে সবাই ঢাক-ঢোল পাড়া হিসেবেই চেনে। মুনিদাশ পাড়ার সবার ব্যস্ত সময়  কাটে ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা আর কঙ্গ তৈরির কাজে। সেখানে অলস বসে না থেকে ছোট-বড় সবাই কোনও না কোনও  কাজ করেন।  এখানে নারীরাও আছেন সহযোগীর ভূমিকায়। তারা বানান ডুগি-তবলার বিড়া। গৃহস্থালির কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তারা লেগে যান পুরুষদের সাথে। দিন-রাত চলে বিরামহীন কাজ। বসে থাকার কোনও জো নেই। আর পূজা এলে তো কথাই নেই। ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহু গুণ। খাওয়া-নাওয়ার সময়ও পাওয়া যায় না।

মনিদাশ পাড়ার শতবর্ষী খগেন্দ্র দাশের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনিদাশ পাড়ায়  প্রায় ২৫টি পরিবার এই ঢাক-ঢোল বানানোর কাজে জড়িত । কেউ পৈতৃক পেশা হিসেবে, আবার কেউ শখ করে এই কাজ করে থাকেন। এখানে প্রায়  ত্রিশ বছর ধরে এই কাজ করা হচ্চে। ঘিওরের এই মুনিদাশ পাড়ায় আর মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায় ২-৩টি পরিবার এই কাজের সাথে জড়িত।  

পাড়ার আরেক প্রবীণ ব্যক্তি খোকা রাম (৮০) জানান, মুক্তিযুদ্ধের কয়েক বছর পরে শ্রীকান্ত বাবু নামের এক লোকের কাছ থেকে আমরা কয়েকজন এই কাজটি শিখেছিলাম। পরে অনেকেই এই কাজের সাথে জড়িত হয়েছেন। পাড়ার সবাই এই কাজ করেই সংসার চালান। এখানে পাইকারি এবং খুচরা বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকার বড় বড় বাদ্যযন্ত্রের শোরুমে এমনকি বিদেশ থেকেও  অর্ডার আসে এখানে।  

বকুল চন্দ্র দাশ (৪৫) জানান, আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এই কাজের সাথে জড়িত। বাদ্যযন্ত্র বানাতে আমরা আম, নিম, রেন্ডিকড়ই, শিমুল কাঠ ব্যবহার করে থাকি। এখানে আমরা ঢাক, ঢোল, ডুগি, তবলা, কঙ্গ ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করে থাকি। এখানে কাঠ ও আকারভেদে বাদ্যযন্ত্রের দাম বিভিন্ন রকমের। তবে একটি ঢাক ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, তবলা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দামে বিক্রি হয়ে থাকে। একেকটি যন্ত্র তৈরি করতে প্রায় ৪-৫ দিন লেগে যায়। ক্রেতারা যেভাবে অর্ডার দেন আমরা সেভাবেই কাজ করে দিই।

নারায়ণ চন্দ্র দাশ (৪৪) জানান, আমাদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ বছর আমরা ঢোলের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছি রামপুরার বাংলাদেশ তাল তরঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা এমনকি দেশের বাইরেও ঘিওরের মুনিদাশ পাড়ার বাদ্যযন্ত্রের অনেক সুনাম আছে। পরিশ্রম বেশি, তবে লাভ খুব একটা না-- এমনটাই জানালেন ঢাকঢোল পাড়ার বাসিন্দারা। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এ শিল্পটি আরো সমৃদ্ধ হবে এমনটিই প্রত্যাশা তাদের।

তথ্যসূত্রঃ
১। উইকিপিডিয়া
২। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডি
৩। দৈনিক জনকণ্ঠ 

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ


ভূমিকম্পে ভারতে ধ্বংস প্রাপ্ত ভবন






কাল ফেসবুকে উৎসব লেগে গিয়েছিল। এত শক্তিশালী ভূমিকম্প আগে বোধহয় কেউ অনুভব করে নি। বিভিন্ন স্থানে অনেকে আহত হয়েছে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে।বাংলাদেশে আতঙ্কিত মানুষ 

আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের সিকিম ও নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায়। জায়গাটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নিকটবর্তী। ভূগর্ভের ২০ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎ পত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূতত্ত্ব বিভাগও (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ উল্লেখ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতীয় এলাকায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।
ইউএসজিএস-এর মতে, ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে ভারতের সিকিমের গ্যাংটক ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরে। ঢাকায় ভূমিকম্পের তীব্রতা চার মাত্রার ছিল বলে মনে করছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশসংলগ্ল এলাকায় সবচেয়ে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৫০ সালে ভারতের আসাম এলাকায় ৮ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে বান্দরবানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। গত বছরের আগস্টে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প ভারতের আসাম এলাকায় সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে চট্টগ্রামের একটি ভবন ধসে ৩০ জনের মতো মারা যায়।
 শিলিগুড়িতে আতঙ্ক 
ভারত, নেপাল ও তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬-তে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো না পাওয়া যাওয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ভূমিধস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন প্রতিবেদনে আজ সোমবার এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সিকিমে ৩৯ জন, পশ্চিমবঙ্গে ছয়, বিহারে ,নেপালে এবং তিব্বতে সাতজন করে নিহত হয়েছে। নেপালে নিহত লোকজনের মধ্যে তিনজন কাঠমান্ডুতে ব্রিটিশ দূতাবাসের দেয়ালধসে মারা যায়।

বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত নয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্পজনিত  এশিয়ান সুনামি সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ভূমিকম্প অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতন প্রায়ই সংঘটিত হয় না তবে একটি ভূমিকম্প একটি সভ্যতাকেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে । ১৮৯৭সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পের  পর এদেশ তেমন কোন বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি বলে আজকের প্রজন্মের কাছে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত বিষয় নয়। তবে বর্তমান অবস্থায় ১৮৯৭ সালের মতন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সময় এসেছে ভূমিকম্প সম্পর্কে জাতীয় এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার।
সম্প্রতি বিলহাম এবং অন্যান্যরা (২০০১) গবেষণা করে দেখেছেন হিমালয় অঞ্চলে ন্যূনতম ৮.১ হতে ৮.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নিকট ভবিষ্যতে অবশ্যম্ভাবী। এমনটি হলে এ অঞ্চলের ৫ কোটি লোক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই ৫ কোটির বিরাট অংশই বসবাস করে আগ্নেয় প¬াবন ভূমিতে আর বাংলাদেশ এই প¬াবনভূমির অংশ বিশেষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ,  জাপান কিংবা  ইন্দোনেশিয়ার মত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থ্না না করলেও শুধুমাত্র ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাবের কারণে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ  স্থান হিসাবে বাংলাদেশের ঢাকা ও ইরানের তেহরান নগরকে সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নগরী হিসাবে চিহ্নিত করেেেছ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই চিহ্নিতকরণের কারণ কি? দুর্বল অবকাঠামো ? অধিক জনসংখ্যা? দ্রারিদ্রতা? যার জবাব হল এগুলোর সবকিছূই এবং আমাদের কুটিল অর্থনীতির কারণে দুর্যোগ মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে অসামর্থতা ঢাকা নগরীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে ।

ভূমিকম্পের ফলে প্রধানত ইট ও কংক্রিটের ঘর- বাড়ি ভেঙ্গে মানুষ চাপা পড়ে। স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নগরীর অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ হয়েছে ও অপরিকল্পিতভাবে এবং দ্রুত। ফলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও ঢাকা শহরে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাতে পারে। তাই সচতন হবার এখনই সময়। 
ভূমিকম্প বিষয়ে আলোচনার পূর্বে ভূমিকম্পের কারণ বিশ্লেষণ করা একান্ত  প্রয়োজন। পৃথিবী ৭ টি প্রধান পে¬টসহ অসংখ্য ছোট ছোট পে¬টে বিভক্ত। এসকল পে¬ট খুবই সক্রিয়। এ পে¬টগূলোর সংযোগস্থলে সাধারণত ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। সংযোগস্থল আবার ২ রকম, কোথাও কোথাও পে¬টগুলো বিপরীত দিকে অগ্রসরমান, কোথাও কোথাও একই দিকে অগ্রসরময়। যে সকল স্থানে পে¬টগুলো একই দিকে অগ্রসরময়। সেসকল স্থানে বেশী এবং বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। একই দিকে অগ্রসরময় পে¬ট বাউন্ডারীকে ট্রেন্স সিসটেম বলে। বিপরীত দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বাউণ্ডারীকে রিজ সিসটেম বলে। এ ছাড়াও  পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল আছে। এ সকল ফাটলকে ভূতাত্বিক ভাষায় ফল্ট বলে। ফল্ট বরাবর ভূস্তরের হঠাৎ বিচ্যুতির জন্য ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই ফল্ট বরাবর বিচ্যুতি সৃষ্টি প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি অন্যান্য কারণেও সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় বাঁধ দিয়ে পানির জলধার তৈরী করলে পানির অত্যধিক ভারে ভূস্তরের দুর্বল স্থান অথবা ফল্ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

এখন বাংলাদেশের অবস্থান এবং ভূমিকম্পের ইতিহাস বর্ণানা করা যেতে পারে  - বাংলাদেশের  উত্তর এবং পূর্ব বরাবর ভারত এবং ইউরেশিয়ার পে¬টের সংযোগস্থল এবং উত্তর -পূর্ব বরাবর এই দুইটি পে¬ট একই দিকে অগ্রসরমান।  আগেই বলছি একই দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। এই পে¬ট স্তরের সংযোগস্থলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিধায় বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে অবস্থিত। প্রশ্ন উঠতে পারে এই পে¬ট বাউণ্ডারি তো বাংলাদেশের বাইরে। তাহলে বাংলাদেশ কেন ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর হিসাবে বলা যেতে পারে ১৯৮৮ সালের মেক্সিকো ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ৩৫০  - ৪০০ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পের ফলে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো সিটির  ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে অথচ  উৎপত্তিস্থলের কাছে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
বিশ্বে প্রায় সব ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দুটি সুপরিচিত অঞ্চল বা বলয়ে উদ্ভূত হতে দেখা যায়। যেমন: দি সারকাম-প্যাসিফিক বেল্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় ও ভূমধ্যসাগরীয় হিমালয় ভূকম্পনীয় বলয়।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হলেও এই কম্পনের প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে ধ্যানধারণা খুবই অপ্রতুল। এ দেশে ভূমিকম্প অনুধাবনের প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ভেতরে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে বিগত ২৫০ বছরের ভূকম্পনের ইতিহাস পাওয়া যায়। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫টিরও বেশি আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালের পর। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিগত ৩০ বছরে ভূমিকম্পের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ উচ্চ ভূকম্পনশীল অঞ্চলগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের হিমালয়ান আর্ক ও শিলং মালভূমি, পূর্বে বার্মিজ আর্ক ও আরাকান ইয়োমা ঊর্ধ্বভঙ্গধারা এবং উত্তর-পূর্বে জটিল নাগা ডিসাং হাফলং ঘাত অঞ্চল। ভূগাঠনিক দিক থেকে দুর্বল এসব অঞ্চল অববাহিকা এলাকার মধ্যে শিলা চলাচলের প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে বলে ধারণা করা হয়

১৮৯৭ এর ভুমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত কাথলিক কবরস্থান  
তাই বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাহিরে যে বাউন্ডারি পে¬ট তার ফলে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে পারে।  গত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে ভূমিকস্পের প্রভাবের ইতিহাস বিশে¬ষণ করলে আমরা এর প্রমাণ দেখতে পাব। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৭ টি বড় মাপের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।


তারিখ-------------ভূমিকম্প উৎপত্তি স্থল-------মেগনিচুড(রিখটার স্কেল)

১০ জানুয়ারী ১৮৬৯-----শিলচড়---------------৭.৫
১৪ জুলাই ১৮৮৫--------মানিকগন্জ-----------৭.০
১২ জুন ১৮৯৭----------শিলং, মেঘালয়--------৮.৭
৮ জুলাই ১৯১৮---------শ্রীমঙ্গল----------------৭.৩
২ জুলাই ১৯৩০---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ জানুয়ারী ১৯৩৪-----বিহার----------------- ৮.৩
৩ জুলাই ১৯৩৪---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ আগস্ট ১৯৫০-------উত্তর আসাম-----------৮.৫


তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতে জিওলজিক্যাল সারভে অভ ইন্ডিয়ার মহাপরিচালকথমাস ওল্ডহ্যাম (১৮১৬-১৮৭৮) প্রথমবারের মতো ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের ক্যাট্যালগ তৈরী করেন। তার ক্যাট্যালগে ৮৯৩ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের উল্লেখ ছিল। পরবর্তীকালে তার পুত্র রিচার্ড ওল্ডহ্যাম (১৮৫৮-১৯৩৬) ক্যাটালগটি আরো সমৃদ্ধ করেন। সেই ক্যাটালগে ১৮৬৯ সালের এবং ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প দুইটির বর্ণনা ছিল।

কাচার ১০ জানুয়ারী ১৮৬৯: এটি Cachar Earthquake নামে পরিচিত। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল শিলচড়, জৈন্তা পাহাড়ের উত্তর অংশে। জায়গাটি সিলেটের খুব কাছে। থমাস ওল্ডহ্যাম অঞ্চলটি সিলেটের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫। ভূমিকম্পটি ৬,৬৫,৬০০ ব:কি: এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল। সিলেটের পূর্বাঞ্চল, শিলচড়, নওগাং, ইম্পাল এলাকার অনেক কংক্রীটের কাঠামো সম্পূর্ণ ধব্বংস হয়েছিল। প্রাণহানীর পরিমাণ ছিল অল্প, সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।

মানিকগন্জ ১৪ জুলাই ১৮৮৫: এটি Bengal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.০। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগন্জ। অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর সংখ্যা জানা যায়নি। যমুনা নদীর উপর এই ভূমিকম্প ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। 
১৮৯৭ এর ধ্বংসাবসেশ
শিলং ১২ জুন ১৮৯৭: এটি Great Indian Earthquake নামে পরিচত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৭। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শিলং, মেঘালয়। সরকারী হিসাবমতে এই ভূমিকম্পে প্রণহানীর সংখ্যা ১৫৪৩। এর মধ্যে সিলেটে ৫৪৫ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ৩০,০০০ বর্গ মাইলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত পাথরের এবং কংক্রীটের দালান ধব্বংস হয়েছিল। এই ভূমিকম্পে সিলেটের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ময়মনসিং এবং উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশে এই ভূমিকম্পের ফলে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল। অসংখ্য যায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। সুরমা এবং ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। ব্রহ্মপূত্রের গতিপথ চিরস্থায়ীভাবে বদলে যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিলো। এর পরের জানা ভূমিকম্পটি হয় ১৯৫০ সালে আসাম চীন সীমান্তের মেডং এলাকায়। এর মাত্রা ছিল রিকটার স্কেলে আনুমানিক ৮.৬। এর ফলে ১৫২৬ জন নিহত হয়েছিলো এবং প্রাকৃতিক ফলাফলে পাহাড়ের পলি ভূমিধ্বস আকারে নেমে এসে ব্রহ্মপূত্র হয়ে যমুনার মাধ্যমে বাংলাদেশে এসে যমূনাকে একটি গতিশীল চরোৎপাদী নদীতে (Dynamic Braided River ) রূপান্তরিত করেছিলো। তারপর থেকেই যমুনার আগ্রাসী ভাঙ্গনের শুরু।  ১৮৯৭ এর আসাম ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া রেলপথ


শ্রীমঙ্গল ৮ জুলাই ১৯১৮: এটি Srimongal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শ্রীমঙ্গলের বালিছেড়া। এই ভূমিকম্পে শ্রীমঙ্গল এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর খবর জানা যায়নি।


এছাড়া ১৫৪৮ সাল থেকে এদেশে ১৯ টি বড় মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে। ১৫৪৮ সালে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভুমিকম্প হয়। রেকর্ড বলে ওই সময় পানি ও কাদা প্রচণ্ড ভাবে উপরে উঠে আসে।

১৬৪২ সালে সিলেটে ভুমিকম্পে বাড়িঘর ধসে গেলেও প্রানহানি ঘটে নি।

১৬৬৩ সালে আসামে ৩০ মিনিটের ভুমিকম্পে সিলেট তছনছ হয়ে যায়।

১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল নিদারুণ ভুমিকম্পে শুধু ঢাকাতেই ৫০০ লোক মারা যান। সারা দেশে ২০০ লোক ভুমিধবসে মারা যান। এছাড়া সীতাকুণ্ডে ২ টি আগ্নেয়গিরি উন্মুক্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৭৭৫ এর ১০ এপ্রিল ও ১৮১১ এর ১১ মে দুটি কম্পন আঘাত হানে। ১৮৯৭ এর ভূকম্পনের রিপোর্ট

ভূমিকম্পের সময় করনীয়
ভুমিকম্পের সময় মোটেই আতঙ্কিত হবেন না। এই দূর্যোগে রক্ষা পেতে সাধারণভাবে কিছু বিধি অনুসরন করুন।

বিধি ১: নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেণ্ড হতে সর্বোচ্চ মিনিটখানেক। এই সময়ে ঘরে অবস্থান করলে টেবিল বা ডেস্কের নিচে সপরিবারে অবস্থান নিন। আপনার মাথায় কোনকিছুর আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

বিধি ২: গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা দ্রুত বন্ধ করুন!
ভূমিকম্পের সময় আগুন লেগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে য়ত দ্রুত সম্ভব রান্না ঘরের গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন যত ছোট ভূমিকম্পই হোক না কেন চুলা বন্ধ করতে হবে।

বিধি ৩: তাড়াহুড়োকরে বাইরে বেড় হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড় হতে গেলে ভীড়ে চাপা পড়ে বা উপর হতে মাথায় কিছু পড়ে আহত হতে পারেন। এই জন্য তাড়াহুড়ো না করে ধীর স্থিরভাবে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাইরে বেড় হবার চেষ্টা করুন।

বিধি ৪: দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন!
দালানে বসবাসকারীদের প্রধান সমস্যা হয় ভূমিকম্পের সময় দরজা আটকে বন্দী হয়ে যাওয়া। এইজন্য বাইরে যাবার দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন।

বিধি ৫: বাইরে বেড় হবার সময় মাথা রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন হতে বাইরে বেড় হবার সময় অনেকেই উপর হতে কোন কিছু পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। এটা এড়াতে বাইরে বেড় হবার সময় মাথার উপর শক্ত বোর্ড বা ট্রে জাতীয় কিছু ধরে রাখুন। এতে করে উপর থেকে কিছু পড়লেও আপনার মাথায় আঘাত লাগবে না।

বিধি ৬: সিনেমা হল বা ডিপার্টমেণ্টাল স্টোরের মত পাবলিক প্লেসে করনীয়!
সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, ডিপার্টমেণ্টাল স্টোর, রেল স্টেশন বা এয়ারপোর্টের মত পাবলিক প্লেসে থাকলে সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরামর্শ অনুসরন করুন।

বিধি ৭: গাড়ি বামদিকে পার্ক করুন!
ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বামপাশে পার্ক করুন। কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্প চলাকালিন সময় গাড়ি চালাবেন না।

বিধি ৮: পাহাড়ী রাস্তায় ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথর খেয়াল করুন!
ভুমিকম্প চলাকালিন সময়ে আপনার গাড়িটি পাহাড়ী এলাকায় থাকলে ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে গাড়িটি পার্ক করুন।

বিধি ৯: উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে হাটুন!
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকা হতে নিরাপদ এলাকায় সরে যাবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করার চেয়ে পায়ে হাটা অনেক নিরাপদ।

বিধি ১০: গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় গুজব বা ভুল তথ্যের কারনে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে বিপদ ডেকে আনেন। এজন্য সঠিক তথ্য পেতে রেডিও/টিভির বুলেটিন শুনুন।


তথ্যসূত্রঃ

১। http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=16&t=4464
২। দৈনিক প্রথম আলো
৩। দৈনিক আমাদের সময়
৪। বাংলাপিডিয়া
৫। www.probashaprotidin.com
৬। সিকিমে ভূমিকম্প কি আরো বড় কিছুর পূর্বাভাস? আমাদের আত্মরক্ষায় করনীয়ঃ এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান, 
৭। http://www.seikatubunka.metro.tokyo.jp/index3files/survivalmanual.pdf

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ


ভূমিকম্পে ভারতে ধ্বংস প্রাপ্ত ভবন






কাল ফেসবুকে উৎসব লেগে গিয়েছিল। এত শক্তিশালী ভূমিকম্প আগে বোধহয় কেউ অনুভব করে নি। বিভিন্ন স্থানে অনেকে আহত হয়েছে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে।বাংলাদেশে আতঙ্কিত মানুষ 

আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের সিকিম ও নেপাল সীমান্তবর্তী এলাকায়। জায়গাটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নিকটবর্তী। ভূগর্ভের ২০ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের উৎ পত্তিস্থল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভূতত্ত্ব বিভাগও (ইউএসজিএস) ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮ উল্লেখ করেছে। আর পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতীয় এলাকায় ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।
ইউএসজিএস-এর মতে, ভূমিকম্প সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে ভারতের সিকিমের গ্যাংটক ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরে। ঢাকায় ভূমিকম্পের তীব্রতা চার মাত্রার ছিল বলে মনে করছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৬২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশসংলগ্ল এলাকায় সবচেয়ে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ ১৯৫০ সালে ভারতের আসাম এলাকায় ৮ দশমিক ৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে বান্দরবানে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। গত বছরের আগস্টে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প ভারতের আসাম এলাকায় সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে চট্টগ্রামের একটি ভবন ধসে ৩০ জনের মতো মারা যায়।
 শিলিগুড়িতে আতঙ্ক 
ভারত, নেপাল ও তিব্বতে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৬-তে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। তবে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র এখনো না পাওয়া যাওয়ায় নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে ভূমিধস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন প্রতিবেদনে আজ সোমবার এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সিকিমে ৩৯ জন, পশ্চিমবঙ্গে ছয়, বিহারে ,নেপালে এবং তিব্বতে সাতজন করে নিহত হয়েছে। নেপালে নিহত লোকজনের মধ্যে তিনজন কাঠমান্ডুতে ব্রিটিশ দূতাবাসের দেয়ালধসে মারা যায়।

বন্যা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের মানুষের কাছে অতি পরিচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত নয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূমিকম্পজনিত  এশিয়ান সুনামি সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। ভূমিকম্প অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতন প্রায়ই সংঘটিত হয় না তবে একটি ভূমিকম্প একটি সভ্যতাকেও একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে । ১৮৯৭সালের গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পের  পর এদেশ তেমন কোন বড় ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়নি বলে আজকের প্রজন্মের কাছে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা তেমন পরিচিত বিষয় নয়। তবে বর্তমান অবস্থায় ১৮৯৭ সালের মতন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সময় এসেছে ভূমিকম্প সম্পর্কে জাতীয় এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার।
সম্প্রতি বিলহাম এবং অন্যান্যরা (২০০১) গবেষণা করে দেখেছেন হিমালয় অঞ্চলে ন্যূনতম ৮.১ হতে ৮.৩ মাত্রার একটি ভূমিকম্প নিকট ভবিষ্যতে অবশ্যম্ভাবী। এমনটি হলে এ অঞ্চলের ৫ কোটি লোক ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। এই ৫ কোটির বিরাট অংশই বসবাস করে আগ্নেয় প¬াবন ভূমিতে আর বাংলাদেশ এই প¬াবনভূমির অংশ বিশেষ। অন্যদিকে বাংলাদেশ,  জাপান কিংবা  ইন্দোনেশিয়ার মত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থ্না না করলেও শুধুমাত্র ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতির অভাবের কারণে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ  স্থান হিসাবে বাংলাদেশের ঢাকা ও ইরানের তেহরান নগরকে সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ নগরী হিসাবে চিহ্নিত করেেেছ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই চিহ্নিতকরণের কারণ কি? দুর্বল অবকাঠামো ? অধিক জনসংখ্যা? দ্রারিদ্রতা? যার জবাব হল এগুলোর সবকিছূই এবং আমাদের কুটিল অর্থনীতির কারণে দুর্যোগ মোকাবেলা ও উদ্ধার তৎপরতায় রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে অসামর্থতা ঢাকা নগরীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে ।

ভূমিকম্পের ফলে প্রধানত ইট ও কংক্রিটের ঘর- বাড়ি ভেঙ্গে মানুষ চাপা পড়ে। স্বাধীনতার পর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নগরীর অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ হয়েছে ও অপরিকল্পিতভাবে এবং দ্রুত। ফলে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও ঢাকা শহরে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাতে পারে। তাই সচতন হবার এখনই সময়। 
ভূমিকম্প বিষয়ে আলোচনার পূর্বে ভূমিকম্পের কারণ বিশ্লেষণ করা একান্ত  প্রয়োজন। পৃথিবী ৭ টি প্রধান পে¬টসহ অসংখ্য ছোট ছোট পে¬টে বিভক্ত। এসকল পে¬ট খুবই সক্রিয়। এ পে¬টগূলোর সংযোগস্থলে সাধারণত ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। সংযোগস্থল আবার ২ রকম, কোথাও কোথাও পে¬টগুলো বিপরীত দিকে অগ্রসরমান, কোথাও কোথাও একই দিকে অগ্রসরময়। যে সকল স্থানে পে¬টগুলো একই দিকে অগ্রসরময়। সেসকল স্থানে বেশী এবং বড় মাত্রায় ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। একই দিকে অগ্রসরময় পে¬ট বাউন্ডারীকে ট্রেন্স সিসটেম বলে। বিপরীত দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বাউণ্ডারীকে রিজ সিসটেম বলে। এ ছাড়াও  পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড় বড় ফাটল আছে। এ সকল ফাটলকে ভূতাত্বিক ভাষায় ফল্ট বলে। ফল্ট বরাবর ভূস্তরের হঠাৎ বিচ্যুতির জন্য ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এই ফল্ট বরাবর বিচ্যুতি সৃষ্টি প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি অন্যান্য কারণেও সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় বাঁধ দিয়ে পানির জলধার তৈরী করলে পানির অত্যধিক ভারে ভূস্তরের দুর্বল স্থান অথবা ফল্ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

এখন বাংলাদেশের অবস্থান এবং ভূমিকম্পের ইতিহাস বর্ণানা করা যেতে পারে  - বাংলাদেশের  উত্তর এবং পূর্ব বরাবর ভারত এবং ইউরেশিয়ার পে¬টের সংযোগস্থল এবং উত্তর -পূর্ব বরাবর এই দুইটি পে¬ট একই দিকে অগ্রসরমান।  আগেই বলছি একই দিকে অগ্রসরমান পে¬ট বরাবর অধিক এবং শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। এই পে¬ট স্তরের সংযোগস্থলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিধায় বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে অবস্থিত। প্রশ্ন উঠতে পারে এই পে¬ট বাউণ্ডারি তো বাংলাদেশের বাইরে। তাহলে বাংলাদেশ কেন ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর হিসাবে বলা যেতে পারে ১৯৮৮ সালের মেক্সিকো ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল ছিল মেক্সিকো সিটি থেকে ৩৫০  - ৪০০ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পের ফলে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো সিটির  ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে অথচ  উৎপত্তিস্থলের কাছে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
বিশ্বে প্রায় সব ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দুটি সুপরিচিত অঞ্চল বা বলয়ে উদ্ভূত হতে দেখা যায়। যেমন: দি সারকাম-প্যাসিফিক বেল্ট বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বলয় ও ভূমধ্যসাগরীয় হিমালয় ভূকম্পনীয় বলয়।
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল হলেও এই কম্পনের প্রকৃতি ও মাত্রা সম্পর্কে ধ্যানধারণা খুবই অপ্রতুল। এ দেশে ভূমিকম্প অনুধাবনের প্রয়োজনীয় সুবিধা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের ভেতরে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে বিগত ২৫০ বছরের ভূকম্পনের ইতিহাস পাওয়া যায়। ভূমিকম্পের রেকর্ড থেকে দেখা যায়, ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক মাঝারি থেকে বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে ৬৫টিরও বেশি আঘাত হেনেছে ১৯৬০ সালের পর। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে বিগত ৩০ বছরে ভূমিকম্পের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ উচ্চ ভূকম্পনশীল অঞ্চলগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরের হিমালয়ান আর্ক ও শিলং মালভূমি, পূর্বে বার্মিজ আর্ক ও আরাকান ইয়োমা ঊর্ধ্বভঙ্গধারা এবং উত্তর-পূর্বে জটিল নাগা ডিসাং হাফলং ঘাত অঞ্চল। ভূগাঠনিক দিক থেকে দুর্বল এসব অঞ্চল অববাহিকা এলাকার মধ্যে শিলা চলাচলের প্রয়োজনীয় স্থান সংকুলান করে বলে ধারণা করা হয়

১৮৯৭ এর ভুমিকম্পে ধ্বংসপ্রাপ্ত কাথলিক কবরস্থান  
তাই বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার বাহিরে যে বাউন্ডারি পে¬ট তার ফলে ভূমিকম্প হলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটতে পারে।  গত ১৫০ বছরে বাংলাদেশে ভূমিকস্পের প্রভাবের ইতিহাস বিশে¬ষণ করলে আমরা এর প্রমাণ দেখতে পাব। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে ৭ টি বড় মাপের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে।


তারিখ-------------ভূমিকম্প উৎপত্তি স্থল-------মেগনিচুড(রিখটার স্কেল)

১০ জানুয়ারী ১৮৬৯-----শিলচড়---------------৭.৫
১৪ জুলাই ১৮৮৫--------মানিকগন্জ-----------৭.০
১২ জুন ১৮৯৭----------শিলং, মেঘালয়--------৮.৭
৮ জুলাই ১৯১৮---------শ্রীমঙ্গল----------------৭.৩
২ জুলাই ১৯৩০---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ জানুয়ারী ১৯৩৪-----বিহার----------------- ৮.৩
৩ জুলাই ১৯৩৪---------ধুবরী, আসাম----------৭.১
১৫ আগস্ট ১৯৫০-------উত্তর আসাম-----------৮.৫


তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতে জিওলজিক্যাল সারভে অভ ইন্ডিয়ার মহাপরিচালকথমাস ওল্ডহ্যাম (১৮১৬-১৮৭৮) প্রথমবারের মতো ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের ক্যাট্যালগ তৈরী করেন। তার ক্যাট্যালগে ৮৯৩ থেকে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত ভারতে ঘটিত ভূমিকম্প সমূহের উল্লেখ ছিল। পরবর্তীকালে তার পুত্র রিচার্ড ওল্ডহ্যাম (১৮৫৮-১৯৩৬) ক্যাটালগটি আরো সমৃদ্ধ করেন। সেই ক্যাটালগে ১৮৬৯ সালের এবং ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প দুইটির বর্ণনা ছিল।

কাচার ১০ জানুয়ারী ১৮৬৯: এটি Cachar Earthquake নামে পরিচিত। ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল শিলচড়, জৈন্তা পাহাড়ের উত্তর অংশে। জায়গাটি সিলেটের খুব কাছে। থমাস ওল্ডহ্যাম অঞ্চলটি সিলেটের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৫। ভূমিকম্পটি ৬,৬৫,৬০০ ব:কি: এলাকা জুড়ে অনুভূত হয়েছিল। সিলেটের পূর্বাঞ্চল, শিলচড়, নওগাং, ইম্পাল এলাকার অনেক কংক্রীটের কাঠামো সম্পূর্ণ ধব্বংস হয়েছিল। প্রাণহানীর পরিমাণ ছিল অল্প, সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি।

মানিকগন্জ ১৪ জুলাই ১৮৮৫: এটি Bengal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.০। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মানিকগন্জ। অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর সংখ্যা জানা যায়নি। যমুনা নদীর উপর এই ভূমিকম্প ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। 
১৮৯৭ এর ধ্বংসাবসেশ
শিলং ১২ জুন ১৮৯৭: এটি Great Indian Earthquake নামে পরিচত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৮.৭। ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শিলং, মেঘালয়। সরকারী হিসাবমতে এই ভূমিকম্পে প্রণহানীর সংখ্যা ১৫৪৩। এর মধ্যে সিলেটে ৫৪৫ জন, রাজশাহীতে ১৫ জন। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের ৩০,০০০ বর্গ মাইলের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত পাথরের এবং কংক্রীটের দালান ধব্বংস হয়েছিল। এই ভূমিকম্পে সিলেটের দুই-তৃতীয়াংশ ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ময়মনসিং এবং উত্তরাঞ্চলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশে এই ভূমিকম্পের ফলে অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছিল। অসংখ্য যায়গায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। সুরমা এবং ব্রক্ষ্মপুত্রের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। ব্রহ্মপূত্রের গতিপথ চিরস্থায়ীভাবে বদলে যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছিলো। এর পরের জানা ভূমিকম্পটি হয় ১৯৫০ সালে আসাম চীন সীমান্তের মেডং এলাকায়। এর মাত্রা ছিল রিকটার স্কেলে আনুমানিক ৮.৬। এর ফলে ১৫২৬ জন নিহত হয়েছিলো এবং প্রাকৃতিক ফলাফলে পাহাড়ের পলি ভূমিধ্বস আকারে নেমে এসে ব্রহ্মপূত্র হয়ে যমুনার মাধ্যমে বাংলাদেশে এসে যমূনাকে একটি গতিশীল চরোৎপাদী নদীতে (Dynamic Braided River ) রূপান্তরিত করেছিলো। তারপর থেকেই যমুনার আগ্রাসী ভাঙ্গনের শুরু।  ১৮৯৭ এর আসাম ভুমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া রেলপথ


শ্রীমঙ্গল ৮ জুলাই ১৯১৮: এটি Srimongal Earthquake নামে পরিচিত। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৬। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল শ্রীমঙ্গলের বালিছেড়া। এই ভূমিকম্পে শ্রীমঙ্গল এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানীর খবর জানা যায়নি।


এছাড়া ১৫৪৮ সাল থেকে এদেশে ১৯ টি বড় মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়েছে। ১৫৪৮ সালে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ ভুমিকম্প হয়। রেকর্ড বলে ওই সময় পানি ও কাদা প্রচণ্ড ভাবে উপরে উঠে আসে।

১৬৪২ সালে সিলেটে ভুমিকম্পে বাড়িঘর ধসে গেলেও প্রানহানি ঘটে নি।

১৬৬৩ সালে আসামে ৩০ মিনিটের ভুমিকম্পে সিলেট তছনছ হয়ে যায়।

১৭৬২ সালের ২ এপ্রিল নিদারুণ ভুমিকম্পে শুধু ঢাকাতেই ৫০০ লোক মারা যান। সারা দেশে ২০০ লোক ভুমিধবসে মারা যান। এছাড়া সীতাকুণ্ডে ২ টি আগ্নেয়গিরি উন্মুক্ত হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৭৭৫ এর ১০ এপ্রিল ও ১৮১১ এর ১১ মে দুটি কম্পন আঘাত হানে। ১৮৯৭ এর ভূকম্পনের রিপোর্ট

ভূমিকম্পের সময় করনীয়
ভুমিকম্পের সময় মোটেই আতঙ্কিত হবেন না। এই দূর্যোগে রক্ষা পেতে সাধারণভাবে কিছু বিধি অনুসরন করুন।

বিধি ১: নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেণ্ড হতে সর্বোচ্চ মিনিটখানেক। এই সময়ে ঘরে অবস্থান করলে টেবিল বা ডেস্কের নিচে সপরিবারে অবস্থান নিন। আপনার মাথায় কোনকিছুর আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

বিধি ২: গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা দ্রুত বন্ধ করুন!
ভূমিকম্পের সময় আগুন লেগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে য়ত দ্রুত সম্ভব রান্না ঘরের গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন যত ছোট ভূমিকম্পই হোক না কেন চুলা বন্ধ করতে হবে।

বিধি ৩: তাড়াহুড়োকরে বাইরে বেড় হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড় হতে গেলে ভীড়ে চাপা পড়ে বা উপর হতে মাথায় কিছু পড়ে আহত হতে পারেন। এই জন্য তাড়াহুড়ো না করে ধীর স্থিরভাবে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাইরে বেড় হবার চেষ্টা করুন।

বিধি ৪: দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন!
দালানে বসবাসকারীদের প্রধান সমস্যা হয় ভূমিকম্পের সময় দরজা আটকে বন্দী হয়ে যাওয়া। এইজন্য বাইরে যাবার দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন।

বিধি ৫: বাইরে বেড় হবার সময় মাথা রক্ষা করুন!
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন হতে বাইরে বেড় হবার সময় অনেকেই উপর হতে কোন কিছু পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। এটা এড়াতে বাইরে বেড় হবার সময় মাথার উপর শক্ত বোর্ড বা ট্রে জাতীয় কিছু ধরে রাখুন। এতে করে উপর থেকে কিছু পড়লেও আপনার মাথায় আঘাত লাগবে না।

বিধি ৬: সিনেমা হল বা ডিপার্টমেণ্টাল স্টোরের মত পাবলিক প্লেসে করনীয়!
সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, ডিপার্টমেণ্টাল স্টোর, রেল স্টেশন বা এয়ারপোর্টের মত পাবলিক প্লেসে থাকলে সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরামর্শ অনুসরন করুন।

বিধি ৭: গাড়ি বামদিকে পার্ক করুন!
ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বামপাশে পার্ক করুন। কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্প চলাকালিন সময় গাড়ি চালাবেন না।

বিধি ৮: পাহাড়ী রাস্তায় ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথর খেয়াল করুন!
ভুমিকম্প চলাকালিন সময়ে আপনার গাড়িটি পাহাড়ী এলাকায় থাকলে ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে গাড়িটি পার্ক করুন।

বিধি ৯: উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে হাটুন!
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকা হতে নিরাপদ এলাকায় সরে যাবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করার চেয়ে পায়ে হাটা অনেক নিরাপদ।

বিধি ১০: গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না!
ভূমিকম্পের সময় গুজব বা ভুল তথ্যের কারনে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে বিপদ ডেকে আনেন। এজন্য সঠিক তথ্য পেতে রেডিও/টিভির বুলেটিন শুনুন।


তথ্যসূত্রঃ

১। http://forum.amaderprojukti.com/viewtopic.php?f=16&t=4464
২। দৈনিক প্রথম আলো
৩। দৈনিক আমাদের সময়
৪। বাংলাপিডিয়া
৫। www.probashaprotidin.com
৬। সিকিমে ভূমিকম্প কি আরো বড় কিছুর পূর্বাভাস? আমাদের আত্মরক্ষায় করনীয়ঃ এ.কে.এম ওয়াহিদুজ্জামান, 
৭। http://www.seikatubunka.metro.tokyo.jp/index3files/survivalmanual.pdf

Friday, September 16, 2011

এক দানবের মৃত্যুর গল্প


১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে গুটি বসন্ত আক্রান্ত মেয়ে








ছোটবেলায় মা বাবার কাছে গল্প শুনতাম। দানবের গল্প। দানবরা মানুষের রাজ্য আক্রমন করে। রাজকুমাররা সেই দানবকে হত্যা করে মানুষকে বাঁচায়।
সেটা ছিল রূপকথার দানব। আরেকটি দানবের গল্প বলত বিশেষ করে ঠাকুরমা।
সেটা আজ থেকে ৪০ বছর আগেও ছিল। কোন গ্রামে তা যদি কোন বাড়ি আক্রমন করত সেই বাড়িতে কান্নার রোল পরে যেত। আশেপাশের মানুশ হয়ে পড়ত শঙ্কিত।
দানবের আগমনে পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে যেত। কখনও বিশাল জনপদ। কেউ ছিল না তাদেরকে বাঁচাতে। অবশেষে এলো এক রাজকুমার। এক বীর। নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে দানবের সাথে যুদ্ধ করত। এবং অবশেষে সেই দানব মারা গেল।

সেই দানবের নাম গুটি বসন্ত এবং সেই রাজকুমারের নাম আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান।

গুটি বসন্ত বা Small Pox একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ভাইরাসটির দুটি Strain আছে Variola major and Variola mino.। লাতিন ভাষায় রোগটিকে Variola অথবা Variola vera

বলা হয়। এঈ কথাটি এসেছে লাতিন Varius থেকে যার অর্থ গুটি। Small pox  শব্দটি প্রথম ১৫ শতাব্দীতে ইউরোপ মহাদেশে ব্যবহার করা হয়েছিল  great pox বা সিফিলিস হতে একে আলাদা করতে।

এটি বিশ্বের একমাত্র রোগ যেটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। গুটি বসন্ত নিশ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে অথবা সরাসরি স্পর্শের সাহায্যে ছড়াত। এই রোগের ভিক্তিমদের শরীরে বিশেষ করে মুখে এবং হাতে অসংখ্য গুটি দেখা দিত। মারা যাওয়ার হার ছিল ৩০-৭৫%। ১ বছরের শিশুদের ৪০-৫০% মারা যেত। বিভিন্ন অঙ্গে ইনফেকশন দেখা দিত। Heart Failure, Pulmonary Edema তে রোগী মারা যেত। জ্বর হওয়ার ৬ দিনের মধ্যেই রোগী মারা যেত। শেষ দিকে অণুচক্রিকা ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেত।

শ্বসনতন্ত্রে ব্রঙ্কাইটিস থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া হত। মস্তিষ্কের প্রদাহ হত। মুখে গুটি চেহারাই পরিবর্তন করে দিত। চোখে গুটি হলে চোখ নষ্ট হয়ে যেত।

গুটি বসন্তের জীবাণু সমৃদ্ধ ভায়াল ১৫০০ অব্দে ভারতে
মানব জাতির আদি লগ্ন থেকে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ৩০০০ বছর আগের মিশরীয় মমির শরীরে গুটি বসন্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ভাইরাসটি প্রথম পৃথক করে কালচার করতে পারেন ১৫০০ অব্দে হিন্দু চিকিৎসকরা।  এটা ধারনা করা হয় মিশরীয় বনিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে রোগটি নিয়ে আসে। ১ম শতকে এটি চীনে যায়। ষষ্ঠ শতকে এটি জাপানে যায়। ৭৩৫-৭৩৭ এর ভিতর গুটি বসন্তের মহামারীতে জাপানের তিনভাগের একভাগ মানুষ মারা যায়। হিপক্রাটাসের বর্ণনায় রোগটি নেই। এ থেকে ধারণা করা হয় ঐ আমলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে রোগটি হয়ত ছিল না। কারো কারো মতে আরবরা যখন স্পেনসহ ইউরোপ আক্রমণ করে তখন তাদের মাধ্যমে রোগটি ইউরোপ অঞ্চলে যায়।

১৮৫৩ সালে হাওয়াই তে গুটি বসন্ত নির্মূল হাসপাতাল
পারস্যের বিখ্যাত বিজ্ঞানী মোহাম্মাদ বিন জাকারিয়া আল রাজী ৯ম শতকে তার Kitab fi al-jadari wa-al-hasbah (The Book of Smallpox and Measles) বইতে গুটি বসন্তের প্রথম সুন্দর উপস্থাপন করেন। তিনিই প্রথম হাম ও জলবসন্তের থেকে এর ব্যবধান করেন।  ক্রুসেডের সময় ইউরোপ এ রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পরে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ইউরোপিয় দের গমনের ফলে রোগটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে। স্প্যানিশদের মাধ্যমে ১৫০৭ সালে ক্যারিবিয়ানে এবং ১৫২০ সালে উত্তর আমেরিকার মুল ভুখণ্ডে রোগটি ছড়িয়ে পরে। ইনকা ও অ্যাজটেকরা শত শত মারা যায় এই রোগে। ১৬৩৩ এ রেড ইন্ডিয়ানরা মহামারীতে মারা যায়। ১৭৮৯-১৮২৯ এর ভিতর তা অস্ত্রালিয়াতে ছড়িয়ে পরে। অস্ত্রেলিয়ান আদিবাসীরা শয়ে শয়ে মারা যায়। 

অবশেষে বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোধে এগিয়ে আসেন। গুতি বসন্তের জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকা বানানোর সফলতা আসে ৫ কারনেঃ
১। ভাইরাসটির ছিল একটি মাত্র সেরোটাইপ।
২। শুধু মানুষ বাহক, প্রাণীরা নয়।
৩। এর বিরুদ্ধে এনটি বডির কার্যক্ষমতা দ্রুত হয়।
৪। লক্ষণ দেখেই রোগটি চিহ্নিত করা যায়। এবং  সেইমতো দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
৫। রোগটি গুপ্ত থাকে না।

১৭৯৬ সালে এডঅওার জেনার গোবসন্ত আক্রান্ত নারীর পুঁজ মানবদেহে ঢুকিয়ে দেখেন এতে জীবাণু প্রতিরোধ করা যায়।

১৮০৩ সালে স্প্যানিশরা তাদের উপনিবেশগুলিতে টিকাদান কর্মসূচী চালু করে। ব্রিটিশরা ভারতে টিকা দান কর্মসূচী চালু করেন। মিয়ানমারে অশিক্ষিত জনগণ টিকা নিতে অসম্মতি জানায়।
১৯১২ সালে আমেরিকাতে গুটি বসন্তের রোগী
১৮৫৩ তে আইন করে ব্রিটেনে টিকা গ্রহন বাধ্যতামুলক করা হয়। ১৮৯৭ এর ভিতর আমেরিকা হতে এই রোগ প্রায় নিরমুল হয়ে যায়। ১৯৫০ এর মাঝামাঝিতে টিকাদান কর্মসূচি জোরেসরে শুরু হয়। কোথাও রোগ দেখা গেলে রিং ভাক্সিনাসনের মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করে দেয়া হয়। রিং ভাক্সিনাসনের পদ্ধতি ছিল যে জনপদে গুটি বসন্ত দেখা দিবে তার আশেপাশের সবাইকে টিকা দিতে হবে। সোভিয়েত ও আমেরিকানরা প্রথমে টিকাদান কর্মসূচিতে অর্থ সাহায্য করত। পরে ১৯৭৩ এর ভিতর ৮০% দেশেই টিকা উৎপাদন শুরু হয়।   

আধুনিক ভায়াল
১৯৭২ সালে যুগোস্লাভিয়াতে সর্বশেষ মহামারীটি দেখা দেয়। কসভর এক তীর্থযাত্রী মধ্যপ্রাচ্য থেকে আক্রান্ত হয়। তার মাধ্যমে বলকানে রোগটি মহামারী আকারে দেখা দেয়। ১৭৫ জন আক্রান্তের ভিতর ৩৫ জন মারা যায়। কোয়ারেনটাইনের মাধ্যমে এবং টিকাদানের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

১৯৭৫ এর অক্টোবরে রহিমা বানু
১৯৭৭ এর ভিতর হর্ন অফ আফ্রিকা ছাড়া আর সব অঞ্ছল থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল হয়ে যায়। Variola minor এর সর্বশেষ ঘটনা রেকর্ড করা হয় ১৯৭৭ সালের ২৬ অক্টোবর। সমালিয়ার এক হাসপাতালের পাচক আলি মাও মালিন নামে এক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। Variola major এর সর্বশেষ কেস পাওয়া যায় ১৯৭৫ এর অক্টোবরে বাংলাদেশের ভোলা দ্বীপের কুরালিয়া গ্রামে। রহিমা বানু নামে ২ বছরের এক মেয়ে। WHO টিম আসে এবং বানুকে সুস্থু করে তুলে। 

১৯৭৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুটি বসন্ত নিরমুল্করনের সনদপত্র দেয়। ১৯৮০ সালের ৮ মে ঘোষণা আসে,


Having considered the development and results of the global program on smallpox eradication initiated by WHO in 1958 and intensified since 1967 … Declares solemnly that the world and its peoples have won freedom from smallpox, which was a most devastating disease sweeping in epidemic form through many countries since earliest time, leaving death, blindness and disfigurement in its wake and which only a decade ago was rampant in Africa, Asia and South America."
 —World Health Organization, Resolution WHA33.3


১৯৬০ ও ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার রোগ নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রের মহামারী রোগ বিশারদ ডাঃ ডি এ হেন্ডারসনের   পৃথিবী থেকে গুটি বসন্ত দূর করার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে তিনি একটি বই লিখেছেন- নাম হলো Small Pox, The death of a Disease - গুটি বসন্ত-একটি রোগের মৃত্যু। গণ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তাঁর কাজের বহু অভিজ্ঞতা তিনি এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন।
১৯৬৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুটি বসন্ত নির্মূল করার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়ার গুরু দায়িত্ব ডঃ হেন্ডারসনের ওপর অর্পণ করেছিলো। সেই অভিযান সফল হয়েছিলো এবং বিশ্ববাসী মূত্যু ও যন্ত্রনার সঙ্গে লড়াইয়ে আরো একবার বিজয়ী হলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮০ সালে পৃথিবী গুটি বসন্ত মুক্ত বলে ঘোষণা করে।
Global Smallpox Eradication Program তিন সাবেক পরিচালক গুটি বসন্তের নির্মূলের ঘোষণা দিচ্ছেন

ডঃ হেন্ডারসনের আরেকটি কীর্তি - যদি গুটি বসন্তের রোগ জীবানু সন্ত্রাসী হামলার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাহলে তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন। তিনি মেরীল্যান্ড রাজ্যের বাল্টিমোর বন্দর নগরীতে প্রতিষ্ঠা করেন Center for Bio-security।  এর প্রস্তুতি স্বরূপ ডঃ হেন্ডারসনের দল ১৮ মাসে ২০ কোটি টীকা বানানোর কাজ সম্পন্ন করে। তিনি বলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর দল এত দ্রুত কাজ করতে  পেরেছিল। 
বাংলাদেশ হতে গুটি বসন্তের নির্মূলকরণে মরহুম ডাঃ কাজী আবুল মনসুরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ডাঃ কাজী আবুল মনসুর উদরাময় আক্রান্ত রোগী হতে কলেরা রোগের জীবাণু (ভাইব্রিও কলেরা) দ্রুত সনাক্ত এবং পৃথকীকরণের জন্য একটি বিশেষ মিডিয়া উদ্ভাবন করেন যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে ৷ এ মিডিয়াটি "মনসুর মিডিয়া" নামে সুপরিচিত ৷ তিনি ইনষ্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ-এর পরিচালক থাকাকালীন সময়ে স্হানীয়ভাবে প্রস্ত্তত গুটি বসন্তের টিকার উন্নতি সাধন করে দেশ হতে গুটি বসন্ত নির্মূল অভিযানে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন ৷ বাংলাদেশের ইনষ্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ এর আই, ভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট স্হাপনের তিনিই পথিকৃত, যা বর্তমানে  বত্সরে বিশ লক্ষ ব্যাগ স্যালাইন তৈরী করছে এবং বাংলাদেশের সকল হাসপাতালে এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে ৷
তথ্য সূত্রঃ

১। http://www.voanews.com/
২। http://www.cabinet.gov.bd/
৩। Wikipedia