জাপান (জাপানি ভাষায়: 日本 নিপ্পোণ বা নিহোণ) এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটি এশিয়া মহাদেশের পূর্ব উপকূলের কাছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩,০০০ দ্বীপ নিয়ে জাপান গঠিত। চারটি প্রধান দ্বীপ হল হনশু, হোক্কাইদো, কিয়ুশু এবং শিকোকু। এছাড়াও এখানে আরও অনেক ছোট ছোট দ্বীপ আছে। জাপানিরা জাপানি ভাষায় তাদের দেশকে নিহোং বা নিপ্পোং বলে ডাকে, যার অর্থ "সূর্যের উৎস"।
১১৮৫ সালের কথা। তখন জাপানের সম্রাট ছিলেন আনতকু নামের সাত বছরের এক বালক। তিনি ছিলেন হেইকি নামের এক সামুরাই গোত্রের নেতা। যারা অন্য সামুরাই গোত্র জেনজির সাথে এক দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হন। প্রত্যেক গোত্রই রাজ সিংহাসনের জন্য দাবি করল নিজেদের এক যোগ্য উত্তরাধিকার। তাদের মধ্যে চূড়ান্ত নৌ যুদ্ধটি হয়েছিল জাপানের ইনল্যান্ড সাগরের দানো ইউরোতে। ১১৮৫ সালের ২৪ এপ্রিল। হেইকিরা সংখ্যায় ও কৌশলে পরাস্ত হল। যারা বেঁচে থাকল প্রচুর সংখ্যায় সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ল। ডুবে মারা গেল। সম্রাটের পিতামহী লেডি নায়ি স্থির করলেন তিনি এবং আনতকু যেন শত্রুর হাতে ধরা না পড়েন।
এরপর কি ঘটল তা বর্ণিত আছে ‘দ্যা টেল অব দ্যা হেইকি’ তে,
তখন সম্রাটের বয়স সাত বছর হলেও তাকে দেখাত অপেক্ষাকৃত বয়স্ক। তিনি এতটাই সুন্দর ছিলেন যে, তার শরীর থেকে যেন বিকীর্ণ হত এক উজ্জ্বলতা এবং তার দীর্ঘ কালো চুল তার পৃষ্ঠদেশের নিচে নেমে থাকত। চোখে এক বিস্ময় এবং চেহারায় উদ্বেগের চিহ্ন নিয়ে তিনি লেডি নায়িকে জিজ্ঞাসা করলেন,” আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান? ”
তিনি ফিরে তাকালেন তরুণ সম্রাটের দিকে। তখন তার গাল বেয়ে অঝোর ধারায় নেমে এসেছিল অশ্রুরাশী। এবং.........তাকে সান্ত্বনা দিলেন, তার দীর্ঘ চুল তার ছাই রং পোশাকে বেঁধে দিয়ে। দুচোখ ছাপানো অশ্রুতে ভেসে, শিশু সম্রাট তার ছোট হাত দুটিকে একত্রিত করলেন। আইসের দেবতার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য তিনি পূর্ব দিকে ফিরলেন। অতঃপর নেম্বাতসু(আমিধা বুদ্ধের কাছে এক প্রার্থনা) টি পুনঃবৃত্তি করার জন্য পচ্চিমে ফিরলেন। লেডি নায়ি তাকে দৃঢ় ভাবে নিলেন নিজের বাহু বন্ধনে এবং ‘মহাসাগরের গভীরতার মাঝেই আমাদের মুক্তি’ এই কথা বলে তাকে নিয়ে অবশেষে ডুবে গেলেন তরঙ্গমালার তলদেশে।
সম্পূর্ণ হেইকি নৌবহরটি ধ্বংস হয়ে গেল। কেবল ৪৩ জন নারি বেঁচে গেল। রাজপ্রাসাদের রাজসহচরি নারীদের বাধ্য করা হল যুদ্ধক্ষেত্রের অদূরে জেলেপল্লিতে ফুল এবং অন্যান্য সুগন্ধি সামগ্রী বিক্রয় করতে। হেইকিরা ইতিহাস হতে প্রায় নিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। রাজ সহচরীদের একটি উগ্র দল এবং তাদের সাথে জেলেদের ঔরসে জন্মানো সন্তান সন্ততিরা যুদ্ধটির স্মরণে একটি উৎসব চালু করে। ছন এবং কালো পাগড়ি পড়ে আকামা তীর্থস্থানে যায় যা ধারণ করে মৃত সম্রাটের সমাধিকে। সেখানে তারা উপভোগ করে একটি নাটক যা দানো এউরা যুদ্ধের পরের ঘটনাগুলোকে চিত্রায়িত করে। শতাব্দির পর শতাব্দি জনগণ বিশ্বাস করে প্রেতরুপী সামুরাইরা বৃথা চেষ্টা করে সমুদ্রকে সেঁচে ফেলার জন্য। একে পরাজয়,রক্ত আর অপমানের গ্লানি থেকে মুক্ত করতে।
জেলেরা বলে যে, সামুরাইরা এখনও সমুদ্রের নিচে ঘুরে বেড়ায়। কাঁকড়া রুপে।
এখানে পাওয়া যায় এমন এক কাঁকড়া যার পৃষ্ঠদেশে রয়েছে একটি মজার চিহ্ন,নকশা অথবা খাঁজ যেটা এক সামুরাইয়ের মুখের আদলের সাথে মিলে যায়। যখন ধরা পড়ে জেলেরা একে খায় না বরং ছেঁড়ে দেয় সমুদ্রে দানো এউরা যুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনার কথা চিন্তা করে।
লৌকিক উপাখ্যানটি জাগিয়ে তুলে এক সমস্যা। কাঁকড়ার খোলসের উপর সামুরাইয়ের ছবি গেল কি করে?
মানুষের মত কাঁকড়ার খোলসের উপর থাকে উত্তরাধিকারের রেখা।
মনে করুন কাঁকড়াটি সুদূর অতীতে জেগে উঠলো কোন একদিন, কোন এক প্রজন্মে।
তার পিছনে ছিল সামুরাইয়ের মুখের আদলের চিহ্ন। এমনকি দানো এউরা যুদ্ধের পূর্বে হয়ত জেলেরা এমন কাঁকড়া খেতে আপত্তি জানিয়েছিল। একে সমুদ্রে ফেলে দিল এবং বিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখল। তুমি যদি কাঁকড়া হও এবং তোমার বাহ্যিক রূপ যদি হয় সাধারণ তবে মানুষ তোমাকে খেয়ে ফেলবে। ফলে তোমার থেকে কম সংখ্যক প্রজাতি জন্মাবে। আর তোমার খোলসের উপর থাকে সামুরাইয়ের ছবি তাহলে মানুষ তোমাকে খাবে না ফলে তোমার উত্তরাধিকার হবে অনেক। প্রজন্মান্তরে কাঁকড়া এবং জেলেদের ক্ষেত্রে সমভাবে, যেসকল কাঁকড়া কোন সামুরাইয়ের মুখাকৃতি সম্পন্ন হল তারা টিকে থাকল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যতদিন না তাদের খোলসে তৈরি হল এক ক্রুদ্ধ সামুরাই এর মুখাকৃতি। কাঁকড়া গুলো কি চায় এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। নির্বাচনটি আরোপিত হয় বাইরে থেকে। তুমি যতটা সামুরাইয়ের মতো তোমার টিকে থাকার সম্ভাবনা তত বেশী। তাই বেশি সংখ্যক হেইকি কাঁকড়া টিকে রইল।
তথ্যসূত্রঃ
১। Karl Segan এর Cosmos: A Personal Voyage এর
"One Voice in the Cosmic Fugue" অধ্যায় থেকে।
২। Discussion Project
No comments:
Post a Comment