বার্লিন থেকে মাত্র ২০০ কিমি দুরে অবস্থিত জার্মানীর পুবের সাংস্কৃতিক শহর ড্রেসডেন । স্যাক্সোনীর রাজাদের এটি রাজধানী ছিল বলে সপ্তদশ ও অস্টদশ শতাব্দীতে স্থাপত্য ও কলায় এটি অনেক প্রাচুর্য লাভ করে। ব্যারোক আর্কিটেকচারে নির্মিত অনেক পুরনো স্থাপত্য ছিল এই শহরটিতে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায়। এগুলোর অনেকগুলোই এখন পূন:র্নির্মিত হচ্ছে।
রাজা অগাস্ট দ্যা স্ট্রন্গের (ফ্রেডেরিক অগাস্টাস ১৬৭০ -১৭৩৩) আমলে এ শহরটি ইউরোপীয় সংস্কৃতির পাদপীঠ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তার ছেলে অগাস্ট দ্য থার্ড ৎসুইঙার (Zwinger)প্যালেসে তার নিজস্ব গ্যালেরির জন্য প্রচুর পেইন্টিংস কেনেন অঠারো শতকের মাঝামাঝি সময় যা ইউরোপ জুড়ে পরিচিতি লাভ করে। রাফায়েলের সিস্টিন ম্যাডোনার মত চিত্রকর্ম তিনি কিনেছিলেন গোটা একটি প্যালেসের মুল্য দিয়ে।
পরবর্তীতে (১৭৮৯ সালে) মোৎসার্ট প্রুসিয়ার রাজা ফ্রেডেরিক টুর রাজপ্রাসাদে কোর্ট মিউজিশিয়ান হিসেবে চাকরি নেন এই ড্রেসডেনেই। আরেক নামকরা সঙীতজ্ঞ কার্ল মরিয়া ফন ওয়েবারও ড্রেসডেনেই তার শিল্পী জীবনের অধিকাংশ কাটান। ১৮৪১ সালে নির্মিত এখানকার সেমপার অপেরা হাউস বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত।
১৯৪৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী মিত্র বাহিনী জার্মানির ড্রেসডেন শহরের উপর মারাত্মক বিমান হামলা করে। এ দিন সন্ধ্যা বেলায় শত শত বৃটিশ বোমারু বিমান প্রচন্ড বিস্ফোরণ ক্ষমতা সম্পন্ন বোমা সহ আগুন ধরিয়ে দেয় এমন বোমা বর্ষণ শুরু করে। অথচ এ শহরে কোনো বড় শিল্প কারখানা বা রণ-শিল্পের সাথে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠান ছিলো না। অব্যাহত বোমা বর্ষণের ফলে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে শহরটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। এ বিমান হামলার আগে ড্রেসডেনে হাজার হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিলো। এ কারণে অজানা সংখ্যক বেসামরিক মানুষ এ বোমা বর্ষণে নিহত হয়। নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ১লক্ষ ৩৫ হাজার হবে বলে মনে করা হয়।
জার্মান কবি কুর্ট ভনেঘট
লিখছেন:
" তোমরা শহরটিকে পুড়িয়ে ফেলেছো, একটি অগ্নিকুন্ড পরিনত করেছো। এই অগ্নিকুন্ড যত জীবন নিয়েছে তা হিরোশিমা এবং নাগাশাকি দুটোর হতভাগ্যদের চেয়েও বেশী।
১৯৪১ সালে ব্রিটিশ এয়ার স্টাফ চার্লস পোর্টাল পরামর্শ দেন নাৎসি জার্মানির মনোবল ভেঙ্গে দিতে তাদের সমস্ত শহরে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হোক। এয়ার মার্শাল আর্থার হারিসের কাছে এই চিন্তাটি ভালো লাগল এবং ১৯৪২ সালে রাজকীয় বিমানবাহিনীর বম্বার কমান্ডের হেড হওয়ার পর তিনি এরিয়া বম্বিং পলিসি গ্রহণ করলেন যেখানে পুরো শহর বা জনপদে বোমাবর্ষণ করা হবে।
রাজকীয় বিমানবাহিনী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মির বিমানবাহিনি (USAAF) র একটি কৌশল ছিল আগুনের ঝড় বা Fire Storm তৈরি করা।
এর জন্য তারা incendiary bomb ব্যবহার করত। এর ভিতর থাকত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দাহ্য পদার্থ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি। কোন জনপদে যখন আগুন লেগে যেত ওখানকার হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠে যেত। ফলে ঠাণ্ডা বাতাস ঝড়ের বেগে ছুটে আসত এবং তারপর মানুষদের আগুনের ভিতর উড়িয়ে নিয়ে ফেলত।
১৯৪৫ সালে আর্থার হারিস ড্রেসডেন শহরে একটি আগুনের ঝড় তৈরির প্ল্যান করলেন। এই প্রাচীন শহরে কোন যুদ্ধ হয়নি এবং বিমান বিধ্বংসী কামানও ওখানে ছিল না।
শহরের জনসংখ্যা অনেক বেশি। উদ্বাস্তুরা আশ্রয় নিয়েছে রেড আর্মির হাত থেকে বাঁচতে।
ড্রেসডেনে অবশ্য প্রথম বম্বিং করা হয় ১৯৪৪ এর ৭ অক্টোবর। ৩০ টি বিমান দিয়ে ৭২.৫ টন বোমা ফেলা হয়।
কিন্তু ১৯৪৫ এর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির ভিতর সবথেকে বেশি হামলা করা হয়।
১৩ ফেব্রুয়ারিতে শহরে প্রথম হামলা করে USAAF Eighth Air Force। প্রথম বিমানগুলোর উপর নির্দেশ ছিল ম্যাগনেসিয়াম বোমা প্যারাসুটের মাধ্যমে ফেলতে হবে যাতে চারপাশ আলোকিত হয় এবং বম্বাররা তার আলোয় সব কিছু দেখতে পায়। খারাপ আবহাওয়ার জন্য USAAF Eighth Air Force এর আক্রমণে বিঘ্ন ঘটে। তাই রাজকীয় বিমানবাহিনী বাকি হামলা করে। নির্দয় আক্রমণে সবকিছু ধ্বংস হয়।
The main bomber force, called "Plate Rack", took off shortly after the Pathfinders. This was a group of 254 Lancasters carrying 500 tons of high explosives and 375 tons of incendiaries, or fire bombs. There were 200,000 incendiaries in all, with the high-explosive bombs ranging in weight from 500 pounds to 4,000 pounds - the so-called two-ton "cookies," also known as "blockbusters," because they had the power to destroy a city block. The high explosives were intended to rupture water mains, and blow off roofs, doors, and windows, creating an air flow that would feed the fires caused by the incendiaries that followed.”
১৪ তারিখ দুপুর বেলা United States VIII Bomber Command এর 1st Bombardment Division ৪৩১ টি বম্বার ড্রেসডেনের আকাশে প্রবেশ করে। ১৫ তারখ পর্যন্ত বোমাবর্ষণ চলে।
বেঁচে যাওয়া একজনের ভাষায়...
“It is not possible to describe! Explosion after explosion. It was beyond belief, worse than the blackest nightmare. So many people were horribly burnt and injured. It became more and more difficult to breathe. It was dark and all of us tried to leave this cellar with inconceivable panic. Dead and dying people were trampled upon, luggage was left or snatched up out of our hands by rescuers. The basket with our twins covered with wet cloths was snatched up out of my mother's hands and we were pushed upstairs by the people behind us. We saw the burning street, the falling ruins and the terrible firestorm. My mother covered us with wet blankets and coats she found in a water tub.
We saw terrible things: cremated adults shrunk to the size of small children, pieces of arms and legs, dead people, whole families burnt to death, burning people ran to and fro, burnt coaches filled with civilian refugees, dead rescuers and soldiers, many were calling and looking for their children and families, and fire everywhere, everywhere fire, and all the time the hot wind of the firestorm threw people back into the burning houses they were trying to escape from.
I cannot forget these terrible details. I can never forget them.” - Lothar Metzger
লাশের স্তূপ পড়ে ছিল রাস্তায়। আগেই বলেছি নিহতের সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ১লক্ষ ৩৫ হাজার হবে বলে মনে করা হয়।
হামলার দিন রাতে রাজকীয় বিমানবাহিনীর এক মেমোতে বলা হয়
“
Dresden, the seventh largest city in Germany and not much smaller than Manchester is also the largest unbombed builtup area the enemy has got. In the midst of winter with refugees pouring westward and troops to be rested, roofs are at a premium, not only to give shelter to workers, refugees, and troops alike, but to house the administrative services displaced from other areas. At one time well known for its china, Dresden has developed into an industrial city of first-class importance.... The intentions of the attack are to hit the enemy where he will feel it most, behind an already partially collapsed front... and incidentally to show the Russians when they arrive what Bomber Command can do.
”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নুরেমবার্গ ট্রাইবু্যনালে জার্মানির নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং টোকিওর ট্রাইবু্যনালে রাজকীয় জাপানী বাহিনীর বিচারের সময়ও এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল। নুরেমবার্গে জার্মান আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন মিত্রশক্তি ড্রেসডেনে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ নির্বিশেষে লাধিক নিরীহ নিরস্ত্র জার্মান নাগরিক হত্যা করেছে, যা যুদ্ধাপরাধের নামানত্মর। টোকিও ট্রাইবু্যনালে এ প্রশ্ন আরও নির্দিষ্টভাবে তুলেছিলেন ভারতের বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল। তাঁর বক্তব্য ছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে এই ট্রাইবু্যনালে জাপানের বিচার করতে হলে এর পাশাপাশি আমেরিকারও বিচার করতে হবে, কারণ যুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের পর আমেরিকা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিপে করে তিন লাখেরও বেশি নিরস্ত্র মানুষ হত্যাসহ দু'টি জনপদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। বলা বাহুল্য এসব বক্তব্য আদালত গ্রহণ করেনি।
এই ধ্বংসস্তুপের মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির মত ঘুরে দাঁড়ায় ড্রেসডেন।
বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণায় শীর্ষে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ড্রেসডেন এই শহরেই অবস্থিত। বর্তমানে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ড্রেসডেনে পড়াশোনা করছে প্রায় ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ ড্রেসডেনের এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোন ড্রিগ্রি অর্জন করা হোক না কেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত৷ জার্মানিতে খুব অল্পসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানকার বিজ্ঞান অনুষদগুলো ড্রেসডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদগুলোর সমতুল্য হতে পারে৷ এই অনুষদগুলোতে শিক্ষা, গবেষণা এবং অধ্যাপনার মান অত্যন্ত উঁচুমানের৷ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ড্রেসডেনে রয়েছে ১৪টি অনুষদ৷ এই অনুষদগুলোর অধীনে প্রায় দুশোটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷
শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যেসব গানে, সেগুলোর মধ্যে খুব অসাধারণ একটি গান Guns and roses এর Knocin' On Heaven's Door দিয়েই লেখাটি শেষ করছিঃ
Mama take this badge from me
I can't use it anymore
It's getting dark too dark to see
Feels like I'm knockin' on heaven's door
Knock-knock-knockin' on heaven's door
Knock-knock-knockin' on heaven's door
No comments:
Post a Comment