১৯০৯ সালে একটি দৈনিকে মেরী মালনের কার্টুন |
আজ মেরী মালনের গল্প বলব।
সে আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেয় ১৮৬৯ সালে। ১৮৮৩ তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়। সেখানে সে নিউ ইয়র্কের এক পরিবারে পাচক হিসেবে কাজ নেয়। একজন অভিবাসী হিসেবে সে ছিল কর্মঠ। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করত।
দুর্ভাগ্য বসত সে নিজেও জানত না সে টাইফয়েড জ্বর নামে একটি ভয়ঙ্কর অসুখের বাহক হিসেবে কাজ করছে।
সান্নিপাতিক জ্বর বা টাইফয়েড স্যালমোনেলা টাইফি নামের ব্যাক্টিরিয়ার ফলে হয় যার কারণে প্রাণ হানিও হতে পারে ׀
জীবাণুযুক্ত খাবারদাবার, মাছি বা অপরিষ্কার হাতের সাহায্যে এ রোগের জীবাণু পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে৷টাইফয়েড রোগের সুপ্তিকাল ১০ থেকে ১৫ দিন৷
প্রথম সপ্তাহে টাইফয়েড রোগের প্রধান উপসর্গ হল জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, জিহ্বার উপরিভাগে ময়লা জমা ইত্যাদি৷ দ্বিতীয় সপ্তাহে জ্বরের সঙ্গে পাতলা পায়খানা শুরু হয়৷ এ সময় প্লীহা বড় হয়ে যেতে পারে না৷ যদি ঠিকমতো চিকিত্সা না হয় তবে তৃতীয় অথবা চতুর্থ সপ্তাহে পরিপাকনালীতে নানা রকমের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে৷ জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষুদ্রান্ত্র ফুটো হয়ে যেতে পারে অথবা পরিপাকনালী থেকে রক্তপাত হতে পারে৷ এখন রোগটির চিকিৎসা আছে। ১০০ বছর আগে মানুষ অতটা সৌভাগ্যবান ছিল না।
টাইফয়েড মেরির বিরুদ্ধে সচেনতামূলক বিজ্ঞাপন |
হাসপাতালে মেরি |
১৯০০ সালের শুরুর দিকে যখন মেরি প্রথম যখন নিউ ইয়র্কে পাচক হিসেবে যোগ দিলেন ওখানকার বাসিন্দাদের টাইফয়েড হতে শুরু করল। কিন্তু মেরি জানত না সেই রোগের বাহক। সে অন্য একটি বাসায় চাকরী নিল। এতা ছিল ম্যানহাটনে। সেখানে পরিবারের লোকেদের টাইফয়েড হল এবং একজন মারা গেল। যথারীতি মেরি আরেক বাসায় গেল। এটা ছিল আইনজীবীর বাসা। সেখানে ৮ জন বাসিন্দার ৭ জনের টাইফয়েড হল। মেরি এই অসুস্থদের সেবা করতে লাগলো কিন্তু এতে অবস্থার অবনতি ঘটলো।
মেরি এবার লং আইল্যান্ডে গেল। এখানে সে ৪ টি পরিবারকে অসুস্থ করল এবং রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেল। জর্জ সোপার একজন রোগতত্ত্ববিদ লং আইল্যান্ড ও নিউ ইয়র্কের ঘটনাগুলোকে একত্রিত করতে শুরু করলেন। সব ঘটনায় একটি কমন সূত্রঃ একজন আইরিশ পাচক।
ডাঃ সোপার মেরিকে খুজে বের করলেন এবং বললেন এই মহামারীর সাথে মেরির সম্পর্ক থাকতে পারে। তিনি মেরির পায়খানার নমুনা চাইলেন। মেরি তাকে অভিশাপ দিল এবং তাড়িয়ে দিল মাংস কাটার ছুরি দিয়ে ধাওয়া করে। ডাক্তার সোপার মেরিকে গ্রেপ্তার করলেন এবং পায়খানা পরীক্ষা করালেন। সে ছিল স্যালমোনেলা টাইফি পজিটিভ। যেহেতু যে প্রকৃত দোষী নয় তাকে গ্রেপ্তার করে রাখা হল না। তাকে নিউ ইয়র্কের একটি সুন্দর কটেজে গৃহবন্দী করে রাখা হল। সে আর পাচকের কাজ করবে না এই শপথে তাকে ছেড়ে দেয়া হল ১৯১০ সালে।
কিন্তু আবার পাচকের কাজে সে ফিরে গেল। নাম পরিবর্তন করে রাখল মেরি ব্রাউন। একের পর এক নতুন লোককে সে আক্রান্ত করতে লাগলো।
ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে লাগলো। কারন সে জানত সরকার তাকে ধরে ফেলবে।
অনেকে মারা গেল। ১৯১৫ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হল। বাকি ২৩ বছর তাকে কোয়ারান্তাইনে থাকতে হল।
নিউ ইয়র্কের ইস্ট রিভারে রিভারসাইড হাসপাতালে শেষ জীবন কাটায় সে। রিপোর্টাররা তার কাছে সাক্ষাৎকার নিতে আসত। কিন্তু দূর থেকে সাক্ষাৎকার নিত।
১৯৩৮ সালের ১১ নভেম্বর ৬৯ বছর বয়সে নিউমোনিয়াতে টাইফয়েড মেরি মারা যায়। ময়নাতদন্তে তার পিত্তথলিতে স্যালমোনেলা টাইফি পাওয়া যায়। হয়ত সে জন্ম থেকে স্যালমোনেলা টাইফি দ্বারা আক্রান্ত ছিল।
তার দেহভস্ম ব্রক্সের Saint Raymond's Cemetery তে সমাহিত করা হয়।
No comments:
Post a Comment