আজ বিজয়া দশমী। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন আজ। গজে চড়ে যে দেবীর আগমন ঘটেছিল মর্ত্যে, আজ তিনি বিদায় নেবেন দোলায়। দুর্গতিনাশিনী হিসেবে সম্মানীয়া এই দেবী বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দুর্গা। পরম পূজনীয় তিনি। তিনিই আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা ও সিংহবাহনা। মানবের কল্যাণে এবং অশুভর ওপর শুভর বিজয়কে তিনি নিশ্চিত করেন। অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভশক্তির জয়। তিনি মানুষকে মহৎ হতে প্রাণিত করেন। মানুষের মনের দৈন্য ও কলুষ দূর করেন। তাই শুভ ও অশুভর মধ্যকার দ্বন্দ্বে শুভশক্তির বিজয়ের তাৎপর্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি সর্বজনীন।
পুরাণে আছে, রামচন্দ্র রাবণ বধ করার জন্য অকালে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। আমাদের বাংলাদেশে এ পূজার প্রচলন হয় হাজার বছরেরও আগে।
এই লেখাটি ২০০৯ এর বিজয়া দশমীর দিন দৈনিক প্রথম আলোতে ছাপানো হয়েছিল।
কর্মযোগী স্বামী অক্ষরানন্দ ১৮ এপ্রিল সোমবার বেলা ১টা ৫৭ মিনিটে ঢাকা অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
বৃহত্তর খুলনা জেলার (বর্তমানে সাতক্ষীরা) অন্তর্গত খুরদা গ্রামে ১৯২৯ সালে স্বামী অক্ষরানন্দজী মহারাজ জন্মগ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণ সংঘের ষষ্ঠ সংঘগুরু শ্রীমত্ স্বামী বিরজানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে মন্ত্রদীক্ষা লাভ করার পর তিনি ১৯৫০ সালে তত্কালীন রামকৃষ্ণ সংঘের কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা আশ্রমে যোগদান করেন। এই আশ্রম পরে কলকাতার দক্ষিণ শহরতলিতে নরেন্দ্রপুরে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৫৯ সালে তিনি শ্রীমত্ স্বামী শঙ্করানন্দজী মহারাজের কাছে সন্ন্যাস লাভ করেন। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম কমপ্লেক্স স্থাপন ও উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন তিনি। এই আশ্রম কমপ্লেক্স আজ বিশেষ করে শিক্ষাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের সহ-সম্পাদক থাকাকালে অক্ষরানন্দজী ১৯৭২ সালে প্রথম বাংলাদেশে আসেন। তিনি এসেছিলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ মিশনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজের তদারকি এবং সমন্বয় সাধনের জন্য। সে সময় তিনি বাংলাদেশে কয়েক মাস অবস্থান করেন। পরে ১৯৭৪ সালে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি স্থায়ীভাবে এদেশে চলে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৭ বছর তিনি অক্লান্তভাবে আর্তমানবতার সেবা করে গেছেন, মানুষকে আধ্যাত্মিকতার আলোকিত পথ দেখিয়েছেন, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে। তিনি রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দের আদর্শ প্রচারের জন্য বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেরিয়েছেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে রামকৃষ্ণ মিশনের পুরনো কেন্দ্রগুলোতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। নতুন নতুন আশ্রম স্থাপিত হয়েছে। তিনি মন্ত্রদীক্ষা দিয়েছেন প্রায় ৫৫ হাজার রামকৃষ্ণ অনুরাগী ভক্তকে।
(সূত্রঃ তা রা প দ আ চা র্য্য ,সাধারণ সম্পাদক, সাধু নাগ মহাশয় আশ্রম, দেওভোগ, নারায়ণগঞ্জ)
তার প্রতি প্রণাম জানিয়ে লেখাটি শেয়ার করছি।
দুর্গাপূজায় এক আধ্যাত্মিক ভাব নিহিত। দেবীর পূজায় লাভ হয় ভুক্তি ও মুক্তি উভয়ই। পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধির মধ্যে মানুষ খোঁজে ভুক্তি বা ভোগের বস্তু। আর পারমার্থিক চেতনার মধ্যে মানুষ পায় সত্যিকারের শান্তি ও মুক্তি। জীব সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণের অধীন। সত্ত্ব—জ্ঞানাত্মক বা প্রকাশস্বরূপ, রজঃ—রাগাত্মক বা আসক্তি ও বিদ্বেষমূলক, তমঃ—মোহ উত্পাদক। সত্ত্বগুণময়ী দেবী স্বয়ং নিয়ন্ত্রণ করছেন রজোগুণের প্রতীক রাগ-দ্বেষযুক্ত মনরূপ সিংহকে। সিংহ শাসন করছে তমোগুণরূপী অসুরকে। এই গুণময়ী দেবীই স্বরূপত ব্রহ্মচৈতন্যময়ী মহাশক্তিরূপে বিভাসিতা। তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুরই নিয়ন্ত্রী শক্তি। এই হলো দেবীপূজার পারমার্থিক তত্ত্ব।
সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা অন্তরে সর্বদা একটা সংগ্রাম অনুভব করি। এ সংগ্রাম শুভ ও অশুভের। রজঃ ও তমঃ থেকে দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ প্রভৃতি অজ্ঞানবাচক গুণ উত্পন্ন। অপরদিকে সত্ত্বগুণ থেকে উত্পন্ন তপস্যা, স্বাধ্যায়, দম, শৌচ, তিতিক্ষা, অহিংসা, সত্য, ত্যাগ, ক্ষমা, ধৃতি, দয়া ইত্যাদি জ্ঞানলাভের সহায়ক। মহাদেবী দুর্গার পূজায় আমাদের একমাত্র প্রার্থনা হবে আসুরিক ও পাশবিক বৃত্তিগুলোকে পরাভূত করে আমাদের অন্তরদেবতাকে জাগ্রত ও সংগ্রামমুখী করে তোলা। দেবী দুর্গার পূজার এ এক তাত্পর্য।
কোনো অস্ত্রশস্ত্র নেই, কী দিয়ে শত্রু নাশ করব—এ প্রশ্ন আমাদের। কিন্তু মায়ের কৃপা হলে আমরা বিবেক, বৈরাগ্য এবং জ্ঞান-অসি দিয়ে সকল শত্রু নাশ করতে পারব। আসলে মায়ের হাতের অস্ত্রগুলো জ্ঞান-অসির প্রতীক। শুভবুদ্ধি ও জ্ঞানার্জনে পশুভাবের নাশ হয়। সর্বশক্তিরূপিণী ও সর্ববীর্যের উত্সরূপা জগজ্জননী দুর্গার আরাধনায় সব মালিন্য থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর কৃপায় আমাদের শুভবুদ্ধির দীপশিখাটি প্রজ্বলিত রাখতে পারলেই স্বার্থক হয় দেবী দুর্গার পূজা।
দশমী তিথিকে বিজয়া দশমী বলে। এ দিন দেবী সপরিবারে ফিরে যাবেন কৈলাসে। মাকে প্রদক্ষিণ করা সন্তানের স্বাভাবিক রীতি। মা আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। এই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। প্রদক্ষিণ করে ভক্তরা স্তব করতে থাকে, ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গা, তুমি শিবা অর্থাত্ মঙ্গলকারিণী। তুমি বিশ্বের ঈশ্বরী, সর্বদেবময়ী। তুমি সকল ভয় ও রোগ হরণকারিণী। তুমি ঔষধীরূপে সকল রোগ নাশ করে থাক। তুমি যোগমায়া, তুমি দুঃখময় সংসারসমুদ্র পার করে দাও। আয়ু, আরোগ্য, বিজয় দাও। তোমাকে নমস্কার। ভূত, প্রেত, পিশাচ, রাক্ষস, দেবতা, মানুষ—সকলের ভয় থেকে সর্বদা আমাদের রক্ষা কর। তোমার নাম ভগবতী, তুমি ভয় দূর কর। তোমার নাম কাত্যায়নী, তুমি বাসনা পূরণ কর। তুমি পুত্রকামীকে পুত্র দান করে থাক। উগ্র তোমার রূপ, তুমি সর্বত্র জয় দান কর। তুমি বিজয়া।
‘দুর্গোত্তারিণী দুর্গে ত্বং সর্বাশুভবিনাশিনী। ধর্মার্থকামমোক্ষায় নিত্যং মে বরদা ভব।...তুমি সকল অশুভবিনাশকারিণী, ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষের বরদানকারিণী। মহিষাসুর আজ তোমার হাতে নিহত। তুমি আমাদের প্রতি প্রসন্না হও। আমাদের পাপ হরণ কর, ক্লেশ হরণ কর, অশুভ হরণ কর, রোগ হরণ কর, ক্ষোভ দূর কর। তুমি যাঁর মাথায় তোমার কল্যাণহাত রাখ, সে প্রভুত্ব লাভ করে। শক্তিহীন, গুণহীন, সত্যাচারবর্জিত মানুষ তোমার কৃপায় পৌরুষ লাভ করে। ক্ষুধা, পিপাসা, আর্তি তুমি নাশ কর। তোমাকে পূজা করে আমরা ধন্য। আমরা কর্তব্য শেষ করেছি, সফল আমাদের জীবন। হে দুর্গে, মহেশ্বরী, তুমি এসেছ—অর্ঘ্য, পুষ্প, নৈবেদ্য, মালা গ্রহণ করে আমাদের কল্যাণ করো। আয়ু, যশ, ভাগ্য, ভক্তি, জ্ঞান, সকল আমাদের হোক। তোমার কৃপায় আমাদের বার্ষিক পূজা সাঙ্গ হোক। মন্ত্রহীন, ক্রিয়াহীন, ভক্তিহীন আমরা, তোমার কৃপায় সব পূর্ণ হোক। তোমার আবাহন জানি না, বিসর্জন জানি না, পূজার ভাবও জানি না, তুমিই আমাদের গতি।
‘হে জননী, পুত্র-আয়ু-ধন বৃদ্ধির জন্য তোমার পূজা হলো। আজ দশমীতে পূজাশেষে যেখানে নিরাকার পরমব্রহ্ম আছেন সেখানে তুমি যাও। আমাদের সুখ দান করার জন্য আবার এসো, শত্রুর দর্প বিনাশ করার জন্য পুনরায় আগমন কোরো। আমাদের পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে তুমি নিজের স্থানে যাও। এক বছর গেলে তুমি আবার এসো। জয়ন্তী বৃক্ষে তোমার পূজা হলো, তুমি সর্বত্র আমাদের জয়ী করো। তুমি সংসার-বন্ধনমুক্তির জন্য কৃপা করো। অশোক বৃক্ষে তুমি ছিলে। তুমি আমাদের শোকরহিত করো। মানবৃক্ষে তোমার পূজা হলো, তুমি আমাদের সর্বত্র মান ও সুখ দাও। ধানরূপে তোমার পূজা হলো, তুমি লোকের প্রাণ ধারণ কর, আমাদের প্রাণে শান্তি দিয়ে প্রাণ ধারণ করাও। হে পরমেশ্বরী, আমরা তোমার দাস। জ্ঞানভক্তি বৃদ্ধির জন্য তোমাকে জলে স্থাপন করা হলো।’
দশমীতে তাই বিসর্জন। প্রতিমা থেকে ঘটে, এবং ঘট থেকে ভক্তের হূদয়ে। ভক্তের হূদয়ে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি তাদের অসুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন। মাকে হূদয়ে অনুভব করে আনন্দে ভক্তরা পরস্পর কোলাকুলি করে। পরস্পর আপন বোধ করে। এত দিন অন্তরে হিংসা, গর্ব, নিন্দা, ক্রোধ নামক অসুর থাকায় সকলকে আপন বোধ করতে পারেনি। এবার সেসব অসুর ধ্বংস হলো মায়ের কৃপায়। সমস্ত ভেদ উঠে গেল। শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলতেন, ‘ভক্তিতে সব জাতিভেদ উঠে যায়। ভক্তের কোনো জাত নেই।’ তাই সকলেই আমরা আপন। বিজয় হলো আসুরিক শক্তির ওপর দৈব শক্তির। মা দুর্গার নামও তাই বিজয়া।
বিসর্জন ও বিজয়ার তাত্পর্য বুঝে ভক্তের মনের শোক কেটে যায়। মায়ের পূজার বিসর্জনমন্ত্রেও বলা হয়, ‘ওঁ গচ্ছ দেবি পরং স্থানং যত্র দেব নিরঞ্জনঃ। অস্মাকং তু সুখং দত্তা পুনরেস্যসি সর্বদা।’ তুমি নিরাকার স্বরূপে ফিরে যাও। সব সময় তুমি অবশ্য আসবে আমাদের আনন্দ দিতে। কাম, ক্রোধ, লোভ নামক শত্রুর দ্বারা সব সময়ই মানুষ আক্রান্ত। ভক্তের প্রার্থনা তাই মায়ের পুনরাগমনের। ‘ওঁ গচ্ছ ত্বং ভগবত্যম্ব স্বস্থানং পরমেশ্বরী। শত্রোদর্পবিনাশায় পুনরাগমনায় চঃ।’ ভক্ত অনুনয় করে ভালোভাবে শোনার জন্য, মনে করে রাখার জন্য।
মায়ের নিজ স্থান ভক্তের হূদয়মন্দিরে। ভক্ত নিজ হূদয়েই মাকে ফিরে যেতে অনুরোধ জানায়। ‘তিষ্ঠ তিষ্ঠ পরে স্থানে স্বস্থানে পরমেশ্বরী। যত্র ব্রহ্মাদয় সর্বে সুরাস্তিষ্ঠন্তি মে হূদি \’ অর্থাত্, হে মা, তুমি আমার হূদয়েই থাকো, যেখানে ব্রহ্মা এবং সব দেবতা বিরাজ করেন। শ্রীরামকৃষ্ণের উদাহরণে এ ভাবটি আরও স্পষ্ট। দক্ষিণেশ্বরের জমিদার মথুরবাবু। বিজয়া দশমীর দিন কিছুতেই মাকে বিসর্জন দিতে দেবেন না। কারণ তিনি মাকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না, নিত্য পূজা করবেন। মায়ের কৃপায় তাঁর ধনের অভাব নেই। কিন্তু বিজয়া দশমীর নিয়ম তো বিসর্জন দেওয়া। কেউ তাঁকে বোঝাতে পারছে না। শেষে শ্রীরামকৃষ্ণ হূদয়ের অনুভূতিতে বোঝালেন, ‘তুমি মাকে ছেড়ে থাকবে, কে বললে? মা কি সন্তানকে ছেড়ে কখনও থাকতে পারে? এ কদিন বাইরের দালানে বসে মা পূজা নিয়েছেন, আজ থেকে মা হূদয়মন্দিরে বসে পূজা নেবেন।’ মথুরবাবু বুঝতে পারলেন বিসর্জনের তাত্পর্য।
বিজয়ায় বিসর্জন মাকে ত্যাগ নয়, বিশেষরূপে অর্জন। এই কদিনের পূজাশেষে যে জ্ঞান অর্জিত হলো, তা হচ্ছে, মা স্বস্থানে কৈলাসে ফিরে গেলেন। এ অবস্থায় মা নিরাকারা। চর্মচক্ষের বাইরে চলে গেলেন। ‘নিরাকারা চ সাকারা সৈব...।’ (প্রাধানিক রহস্য-২৯, চণ্ডী)
আবার মা সন্তান তথা আমাদের কল্যাণে আবারও আসবেন বছরান্তে রূপাধারে। এভাবে মা ভক্তের হূদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অবস্থান করবেন। এ প্রতিষ্ঠাই আমাদের জ্ঞানার্জন। বিসর্জন অর্থে আত্মপ্রতিষ্ঠ। বিজয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে জ্ঞান অর্জন দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে। এ শুভদিনে ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা, পণ্ডিত-মূর্খ, উঁচু-নিচু বিচার না করেই সকলে একাত্মবোধে আবদ্ধ। সকল ক্ষুদ্রতা ও পাশবিক বৃত্তির অবসান ঘটিয়ে আজ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সহাবস্থানের ভাবনা জাগ্রত হয়ে মানবকল্যাণে সকলে ব্রতী। দুর্গাপূজার বিজয়ার তাত্পর্য এটাই। বিজয়ার শুভ এই দিনে দুঃখ নয়, বেদনা নয়, সকলে আনন্দে মুখরিত এবং সকলের মধ্যে প্রেমের বন্ধনে আকৃষ্ট। এই দিনে পাড়া-পড়শি সকলকে নিয়ে প্রেমালিঙ্গন একটি বিশেষ দিগ্দর্শন। তাই ভক্ত আকুতিতে প্রার্থনা জানায়—
‘ওঁ দেবি ত্বং জগতাং মাতঃ স্বস্থানং গচ্ছ পূজিতে।
সংবত্সর ব্যতিতে তু পুনরাগমনায় চঃ \’
অর্থাত্, হে দেবী, জগজ্জননী, পূজিতা হয়ে তুমি নিজ স্থানে গমন কর এবং এক বছর পরে আবার তুমি অবশ্য আসবে।
No comments:
Post a Comment