শিল্পীর চোখে প্রথম ইউএফও |
ইউএফও হল Unidentified Flying Object (UFO), অর্থ্যাৎ আকাশে দৃশ্যমান যে কোন অচেনা অজানা বস্তু বা আলোকেই ইউএফও বলা হয়। প্রাচীনকাল হতেই আকাশে অদ্ভুত অদ্ভুত সব বস্তু দেখার খবর শোনা গেলেও ১৯৪৭ সালে যখন আমেরিকাতে প্রথম ইউএফও দেখা যাবার খবর ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়, তারপর থেকে এটিই হয়ে ওঠে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এর পর আরো কয়েক হাজার বার ইউএফও দেখা যাবার খবর পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগই ভুয়া। সাধারন মানুষ প্রায়ই উজ্জ্বল কোন গ্রহ কিংবা তারা, বিমান, পাখি, বেলুন, ঘুড়ি, কিম্ভুতকিমাকার মেঘ দেখে তা ইউএফও ভেবে ভুল করে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সময়সাপেক্ষ তদন্ত।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকী বিবেচনা করে মার্কিন বিমানবাহিনী ১৯৪৭ সালে ইউএফও তদন্তে নামে। তদন্তকাজ শেষ হয় ১৯৬৯ সালে। এ সময়ে প্রাপ্ত সর্বমোট ১২,৬১৮ টি ঘটনার মধ্যে ৭০১ টি ঘটনার কোন ব্যাখ্যা তারা দিতে পারে নি। মার্কিন বিমানবাহিনী তাদের তদন্ত শেষ করে এই বলে যে “no UFO reported, investigated, and evaluated by the Air Force has ever given any indication of threat to our national security”। ১৯৬৯ সালের পর আর কোন মার্কিন সংস্থা ইউএফও তদন্ত কাজে সরাসরি হাত দেয়নি। এরপর ১৯৯৭ সালে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ মার্কিন সামরিক বাহিনীর উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন গোয়েন্দা বিমান ব্যবহারের কথা ফাঁস করে দেয়। ১৯৫০ হতে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত যতগুলো ইউএফও দেখা গেছে তার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ ঘটনার জন্য দায়ী Lockheed U-2A এবং Lockheed SR-71 নামের এই বিমান দুটি।
যদিও কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি, তারপরও অনেকেই এটিকে ভিনগ্রহের বাসিন্দাদের আকাশযান বলে মনে করেন। আর এটিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। অধিকাংশ বিজ্ঞানীই এই মহাশূণ্যে কোথাও না কোথায় অতিমানবীয় বুদ্ধিমান প্রানীর অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
যাই হোক আজ একটি সত্য কাহিনী বলব এই ইউএফও র উপর।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার রাজধানী ফিনিক্স।
এটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম শহর। এখানে বাস করেন প্রায় ১৫,৬৭,৯২৪ জন মানুষ, যা ফিনিক্স মেট্রোপলিটান এলাকা, দ্য ভ্যালি অফ দ্য সান (বাংলা সূর্য উপত্যকা) নামে পরিচিত। মেট্রোপলিটান শহর বা মহানগরীর ভিত্তিতে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ নগরাঞ্চল। এছাড়ও ভূমির দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ একটি অঞ্চল।
১৩ মার্চ ১৯৯৭
মরুভূমি থেকে আসা উষ্ণ বায়ু জনজীবনকে করেছে ব্যহত। ঐ দিন ইতিহাসে সবচেয়ে জন
প্রিয় ইউএফও দেখার ঘটনা ঘটে।
সন্ধ্যা ৬.৫৫ পিএসটি (Pacific Standard Time): নেভেদার হেন্ডারসনে এক লোক রিপোর্ট করে সে জেট বিমানের মত বড় V আকৃতির অচেনা বস্তু দেখেছে। এটা সো সো শব্দ করছিল। ৬ টি আলো জ্বলছিল। এটা উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিণ পচ্চিমে গিয়েছিল।
সন্ধ্যা ৭.১৫ পিএসটিঃ অ্যারিজোনার এক পুলিশ অফিসার ২য় ব্যাক্তি হিসেবে ঐ অজানা বস্তুটি দেখার রিপোর্ট করেন। তিনি গাড়ি থেকে দেখেন লাল/কমলা রঙের ৪ টি আলো এবং পঞ্চম আলোটি তাদের পথ দেখাচ্ছে। তিনি বাসায় ফিরে আসেন এবং বাইনোকুলার দিয়ে ঐ বস্তুটি দেখেন যতক্ষণ না ওটা দিগন্তে বিলীন হয়ে না যায়।
রাত ৭.১৭ পিএসটিঃ প্রেস্কত উপত্যকার উপর আলোগুলো দেখা যায়। পুলিশ এর কাছে এবং সংবাদ সংস্থার কাছে ফোন আসতে থাকে একের পর এক। কারণ এই বস্তুটি এতই বড় ছিল তারকা খচিত আকাশের অনেক জায়গা দখল করে রেখেছিল।
http://www.phoenixlightsufo.com/ সাইটটিতে টিমথি লে ( ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ) সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।
National UFO Reporting Center প্রেস্কত উপত্যকার এই বর্ণনা পেয়েছে,
While doing astrophotography I observed five yellow-white lights in a "V" formation moving slowly from the northwest, across the sky to the northeast, then turn almost due south and continue until out of sight. The point of the "V" was in the direction of movement. The first three lights were in a fairly tight "V" while two of the lights were further back along the lines of the "V"'s legs. During the NW-NE transit one of the trailing lights moved up and joined the three and then dropped back to the trailing position. I estimated the three light "V" to cover about 0.5 degrees of sky and the whole group of five lights to cover about 1 degree of sky.
ডেওয়ে ঃ
ডেওয়ে প্রেস্কত থেকে ১০ কিমি দূরে অ্যারিজোনার একটি শহর। হাইওয়ে ৬৯ এ ৬ জন লোক আলোগুলো দেখতে পায়।
ফিনিক্সের উপর প্রথম আবির্ভাবঃ
টিম লে এবং তার স্ত্রী, তার পুত্র হাল এবং তার নাতি ডেমিয়েন প্রেস্কত উপত্যকার উপর প্রথম আলগুলো দেখতে পান তাদের থেকে ৬৫ কিমি দূরে। প্রথমে তা লাগছিল ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন আলো যেন একটি বেলুনের উপর আছে। পরবর্তীতে তারা দেখলেন আলোগুলো তাদের দিকে আসছে। পরবর্তী ১০ মিনিটে আলোগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এবং এটি একটি V এর আকার নেয়। তাদের থেকে পৌনে এক মাইল দূরে জিনিসটি carpenter's square এর মত আকৃতি নেয়। এর উপর ৫ টি আলো। সম্মুখে একটি এবং দুই পাশে দুইটি করে। জিনিসটি আস্তে আস্তে যাচ্ছিল এবং তাদের বাড়ি থেকে ১০০-১৫০ ফুট দূরে থাকে। স্কয়া পিক পর্বতের এবং Phoenix Sky Harbor International Airport দিকে বস্তুটি যেতে থাকে।
প্রতক্ষদর্শীরা জানায় বস্তুটির কিছুটা উঁচুতে ছিল। তাই মেঘের জন্য মাঝে মাঝে একে দেখা যাচ্ছিল না।
এর পর নয়টি আলো নিয়ে আরও একটি ত্রিভুজাকার বস্তু ফিনিক্সের আকাশে প্রবেশ করে। বিল গেইনার নামে এক ব্যক্তি জানান, “I'll never be the same. Before this, if anybody had told me they saw a UFO, I would've said, 'Yeah, and I believe in the tooth fairy'. Now I've got a whole new view. I may be just a dumb truck driver, but I've seen something that don't belong here ”
২ ঘণ্টা ধরে ফিনিক্সের অধিবাসীরা এই বস্তুটি দেখেন। ১০০ এর উপর লোক হ্যান্ড ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করেন এবং ছবি তুলে রাখেন। এই ফটোগুলোই Discovery Channel এবং the History Channel এ ইউএফও এর উপর প্রামাণ্য চিত্রে ব্যবহার করা হয়। সবথেকে বেশি দেখা যায় আলোগুলো ক্রমান্বয়ে জ্বলছে নিভছে।
UFO advocate Jim Dilettoso জানান spectral analysis এর মাধ্যমে ফটোগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে এটা মানুষ সৃষ্ট ফটো না।
২য় আলো |
ঘটনা টির বিশ্লেষণ / ব্যাখ্যা আসে বিভিন্ন ভাবেঃ
প্রথম বস্তুটি "V" উত্তর অ্যারিজোনা থেকে ক্রমান্বয়ে পুরো রাজ্যটিকে প্রদক্ষিণ করেছে। অনেকের মতে ওটা ছিল একটি উড়োজাহাজ।
ফিনিক্স নিউ টাইমসের রিপোর্টার জ্যানেট গনজালেসের মতে আলোগুলো ছিল আলাদা আলাদা বস্তুর। তিনি বলেন ,” a phenomenon known as illusory contours can cause the human eye to see unconnected lines or dots as forming a single shape. ”
২য় বস্তুটি নয়টি আলোর সমাহার। অনেকের মতে প্রথম বস্তুটি এবং ২য় বস্তুটি একই। মিডিয়াতে এই ঘটনাটি বেশি এসেছে। আমেরিকার বিমানবাহিনী ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেন এ৪০ বিমান থেকে ফ্লেয়ার ফেলার বিষয় হিসেবে। এটা ছিল তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ।
বিমানবাহিনীর মতে,” the flares would have been visible in Phoenix and appeared to hover due to rising heat from the burning flares creating a "balloon" effect on their parachutes, which slowed the descent. The lights then appeared to wink out as they fell behind the Sierra Estrella, a mountain range to the southwest of Phoenix. ”
মার্চ ২০০৭ এ Maryland Air National Guard এর পাইলট লে। এড জোন্স দাবী করেন প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তিনিও ঐ রাতে ফ্লেয়ার ফেলেছিলেন।
পরে স্থানীয় টেলিভিশনে ফ্লেয়ার এবং ঐ ঘটনার ছবি তুলনা করে সাদৃশ্য দেখানো হয়। ঐ হিসেবে ফ্লেয়ারগুলো ফিনিক্স হতে ৫০-৭০ মাইল দূরে পরার কথা।
তবে সমালোচকরা বলেন ফ্লেয়ার চারপাশকে আলোকিত করে কিন্তু ঐ আলোগুলো ছিল নিষ্প্রভ। ঐসময় মিডিয়া প্রচারণা কম থাকলেও ১৯৯৭ এর ১৮ জুন USA Today এর সামনের পাতায় রিপোর্ট আসায় এটা জাতীয় আলোড়ন তুলে। ABC and NBC television networks ও তারপর রিপোর্ট করে। এরপর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ইউএফও এর উপর প্রামাণ্য চিত্রে তা প্রচার করা হয়।
কিছুদিন পর তৎকালীন অ্যারিজোনার গভর্নর ফিফ স্যমিংতন ৩ সংবাদ সম্মেলন করে জানান,” they found who was responsible ”
২০০৭ সালে তিনি জানান তিনি অজানা আলো দেখেছিলেন।
তিনি The Daily Courier কে সাক্ষাৎকারে বলেন,
” 'm a pilot and I know just about every machine that flies. It was bigger than anything that I've ever seen. It remains a great mystery. Other people saw it, responsible people. I don't know why people would ridicule it ”
আগে তিনি বলেছিলেন,” It was enormous and inexplicable. Who knows where it came from? A lot of people saw it, and I saw it too. It was dramatic. And it couldn't have been flares because it was too symmetrical. It had a geometric outline, a constant shape ”
তিনি আরও জানান তিনি Luke Air Force Base এর কম্যান্ডার, ন্যাশনাল গার্ডের জেনারেল এবং জননিরাপত্তা বিভাগের প্রধানকে তত্থের জন্য অনুরোধ করেও ব্যর্থ হন।
টেলিভিশন শো UFO Hunters এর অ্যারিজোনা লাইটস নামক পর্বে তিনি বলেন, তিনি মিলিটারিকে আলোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে কোন উত্তর পান নাই।
বিমানবাহিনীর ফ্লেয়ার তত্ত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, "As a pilot and a former Air Force Officer, I can definitively say that this craft did not resemble any man made object I'd ever seen. And it was certainly not high-altitude flares because flares don't fly in formation"
২০০৭ সালের আলোর গুচ্ছ |
২০০৮ এর আলোক গুচ্ছ |
পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এবং ২০০৮ এর ২১ এপ্রিল ঐ আলোগুলো আবার আবির্ভূত হয়।
এগুলোকে যথাক্রমে ফ্লেয়ার এবং হিলিয়াম বেলুনের আলো বলে জানানো হয়।
এগুলোকে যথাক্রমে ফ্লেয়ার এবং হিলিয়াম বেলুনের আলো বলে জানানো হয়।
আমাদের এই জীবনে কত যে রহস্য,অজানা ঘটনা লুকিয়ে আছে সেটাই বা ক'জন জানে?
No comments:
Post a Comment